দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ‘লিটন দাস ইজ পেইন্টিং মোনালিসা এট টনটন টুডে’- কথাটা ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপের। শিরোনামে সাকিব আল হাসান লিখে শুরুটা হলো লিটন দিয়ে, একটু বৈসাদৃশ্য আছে বৈকি। তবে বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটসম্যান লিটন দাস কে টেনে আনা স্রেফ উদাহরণ হিসেবেই।

ক্যারিবীয় ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ লিটন দাসের একটি ইনিংস দেখেই যদি এমন উক্তি করে বসেন, তাহলে সাকিবের পুরো বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সকে তিনি বিশেষায়িত করবেন কোন বিশেষণে? বিশপ কেনো সাকিবের এই পারফরম্যান্সের প্রশংসা করার সক্ষমতা হয়তো দুনিয়ার সব কবি সাহিত্যিকদেরও নেই।

ব্যাট হাতে যেভাবে সাকিব দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন, বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যেভাবে নিজের কাজটা করেছেন কিংবা ফিল্ডিংয়ে সাকিব যেমন ক্ষিপ্রতা দেখিয়েছেন- তাতে এবারের বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট সেরার পুরুস্কারটা তার হাতেই উঠতো নিঃসন্দেহে। কিন্তু তিনি আটকে গেছেন একটি জায়গাতেই, দল!

বিশ্বকাপে সাকিবের দল অর্থাৎ বাংলাদেশ আটকে গেছে প্রথম পর্বেই। সেখানেও আছে অষ্টম স্থানে। তবুও ফাইনালের আগে প্রশ্ন জাগছে সাকিবই কি এবারের আসরে সেরা খেলোয়াড় হয়ে যাবেন? এ প্রশ্ন আসাটা সাকিব ছাড়া অন্য যে কারো ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক মনে হতো দলের এমন হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের পর। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপে ব্যাটে বলে সাকিব যেমন অবিশ্বাস্য খেলেছেন তাতে তার নাম না আসাটাই বরং অস্বাভাবিক হতো।

চলতি বিশ্বকাপে ৮ ইনিংস ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করেছেন। ২ সেঞ্চুরির সঙ্গে পেয়েছেন ৫ ফিফটিও। এই ৮ ইনিংসে সাকিবের সর্বনিম্ন রান কত জানেন? ৪১! ব্যাট হাতের অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক সাকিব বল হাতেও কম যাননি। ৮ ইনিংসে শিকার করেছেন ১১ উইকেট।

ব্যাটে বলে এমন অবিশ্বাস্য সাকিবের টুর্নামেন্ট সেরার পথে বাঁধা হবেন যারা, তারা প্রায় সবাই হয় ব্যাটিং নয়ত বোলিংয়ে ভালো করেছেন। কেউই দুই বিভাগেই সমান পারদর্শীতা দেখাননি। সাকিবের চেয়ে বেশি রান করা দুই ব্যাটসম্যানই বিদায় বলেছেন এবারের বিশ্বকাপকে। ৯ ম্যাচ খেলে সাকিবের চেয়ে ৪২ রান বেশি করা রোহিত শর্মার সংগ্রহ ৬৪৮ আর ওয়ার্নার ১০ ম্যাচ খেলে করেছেন রোহিতের চেয়ে এক রান কম অর্থাৎ ৬৪৭।

তবে এই দুইজনের কারো নেই কোনো উইকেট। যেখানে সাকিবের উইকেট আছে ১১টি। সেই হিসাবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন অনেক বড় ব্যবধানে। সাকিবের আরেক প্রতিদ্বন্দী অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ১০ ম্যাচ খেলে ২৭ উইকেট পেলেও ৮ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে করেছেন মাত্র ৬৮ রান।

স্টার্কও তাই হিসেবের খাতায় নেই। উপরের তিনজনই ব্যর্থ হয়েছেন দলকে ফাইনালে তুলতে। কিন্তু টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিততে সাকিবের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দী এখন জো রুট ও জেসন রয়। তাদের দল ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে ফাইনালেও।

৭ ম্যাচে ৬ ইনিংসে ৭১.০০ গড়ে ৪২৬ রান করার পাশাপাশি জো রুট পেয়েছেন ২ উইকেটও। অন্যদিকে রয় ৬৮.৬২ গড়ে ৫৪৯ রান করলেও তার ঝুলিতে নেই কোনো উইকেট। এই দুইজন তালিকায় আছেন তাদের দল ফাইনালে উঠেছে বলেই।