দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লাভ-লোকসান ও সম্পদের হিসাবের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা দূর করার জন্য নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে নিরীক্ষা বা অডিটরস প্যানেল গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ইতিমধ্যে এই অডিটর প্যানেলে ৪০ অডিটরকে তালিকাভুক্ত করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু আজ ১৬ জুলাই এই প্যানেলের আওতায় থাকা আহমদ অ্যান্ড আকতারকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নতুন করে সংশোধিত অডিটরের প্যানেলের ৩৯ অডিটরের তালিকা প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, বিএসইসির তালিকার বাইরে কোনো অডিটরের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করাতে পারবে না। এছাড়া একই অডিটর দিয়ে তিন বছরের বেশি আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করাতে পারবে না।

প্রকাশিত তালিকায় যেসব অডিটরের নাম রয়েছে তা হল: এ হক এন্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, এ কাশেম এন্ড কোং, এ ওহাব এন্ড কোং, এসিএনএবিআইএন, আহমেদ মাশুক এন্ড কোং, আহমেদ জাকির এন্ড কোং, এআরটিআইএসএএন, আশরাফ উদ্দিন এন্ড কোং, আতা খান এন্ড কোং, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, ফেমস এন্ড আর, হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোং, হাওলাদার ইউনুস এন্ড কোং, হুসাইন ফরহাদ এন্ড কোং, ইসলাম আফতাব কামরুল এন্ড কোং, ইসলাম কাজি শফিক এন্ড কোং, কে এম আলম এন্ড কোং, কে এম হাসান এন্ড কোং, কাজি জহির খান এন্ড কোং,

খান ওহাব শফিক রহমান এন্ড কোং, এম জে আবেদীন এন্ড কোং, এম এম রহমান এন্ড কোং, ম্যাবস এন্ড জে পার্টনার্স এন্ড কোং, মাহফিল হক এন্ড কোং, মালেক সিদ্দিক ওয়ালি, মাহিশ মুহিত হক এন্ড কোং, নুরুল ফারুক হাসান এন্ড কোং, অক্টোখান, পিনাকি এন্ড কোম্পানি, রহমান মোস্তফা আলম এন্ড কোং, রহমান রহমান হক, এস এফ আহমেদ এন্ড কোং, এস কে বরুয়া এন্ড কোং, সিদ্দিক বসাক এন্ড কোং, সিরাজ খান বসাক এন্ড কোং, সাইফুল সামসুল আলম এন্ড কোং, তোহা খান জামান এন্ড কোং এবং জোহা জামান কবির রশিদ এন্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কোম্পানির লাভ-লোকসান ও সম্পদের হিসাব নিরীক্ষা করে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ও স্বচ্ছভাবে (ট্রু অ্যান্ড ফেয়ার) আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত না করার অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষকের স্বাধীন মত দেয়ার সুযোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা দেয়া হচ্ছে না।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচালকদের ফরমায়েসে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করছেন নিরীক্ষকরা। এসব কারণে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারছেন না। যদিও আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন দিচ্ছে কমিশন।

এসব অনিয়ম দূর করতে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা সংক্রান্ত আইনের একটি ধারা পরিবর্তন করে এক নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সংশোধিত ধারা অনুযায়ি, তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিকে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত অডিটর প্যানেলের মাধ্যমে নিরীক্ষা করাতে হবে এবং টানা তিন বছরের বেশি একই ফার্মকে দিয়ে নিরীক্ষা করানো যাবে না।

নতুন আইন ‍অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অবশ্যই কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত অডিটর প্যানেলের ফার্মের মাধ্যমে করাতে হবে। এর পাশাপাশি কোনো কোম্পানি টানা তিন বছরের বেশি একই অডিটর ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করাতে পারবে না। সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যেই অন্য কোনো অডিটর ফার্ম নিয়োগ করতে হবে।

অন্যদিকে কমিশনের অডিটর প্যানেলের অডিটর ফার্মগুলোকেও একই নির্দেশ প্রদান করা হয়। প্যানেলের অডিটর ফার্মগুলোও একই কোম্পানির নিরীক্ষা টানা তিন বছরের বেশি করতে পারবে না। আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে কোম্পানিগুলোর ক্রমাগত অনিয়ম ও দূর্নীতি অভিযোগ ওঠায় কমিশন একটি অডিটর প্যানেল তৈরী করার ঘোষণা দেয়।

ঘোষণা অনুযায়ী প্রথমে ৩৬,পরবর্তীতে ৪০ অডিটরের নাম প্রকাশ করা হয়। যাদের মধ্যে আহমেদ অ্যান্ড আকতার একজন। কিন্তু সম্প্রতি অডিটরটির লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় আহমেদ অ্যান্ড আকতারকে বাদ দিয়ে ৩৯ অডিটরের নাম প্রকাশ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এই ৩৯ অডিটরের মধ্যে যেকোনো নিরীক্ষক দিয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক বিবরণী তৈরি করানো যাবে।