মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে চলছে ধারাবাহিক দরপতন। নানামুখী গুজব বিভিন্ন ইস্যুতে চলমান রয়েছে এ পতন। পতন আরও বেগবান করছে প্যানিক সেল। পতন দীর্ঘমেয়াদি হবে এমন আশঙ্কা করে প্যানিক সেলে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারী। ফলে পতন থামছে না। উল্টো বাজার পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে ফোর্সড সেল আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে ফোর্সড সেলের জন্য বিনিয়োগকারীদের মার্জিন কল করেছে ব্রোকারেজ হাউজ কর্তৃপক্ষ। একেই বলে জ্বালার ওপর বিষ ফোঁড়া।

একদিকে মূলধন হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা তার ওপর সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর ফোর্সড সেল। পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে এখন তাদের ঋণের টাকা তুলে নিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফোর্সড সেল বা জোরপূবক বিক্রি করে দিচ্ছে। কোনো কোনো হাউজ আবার বিনিয়োগকারীদের না জানিয়েই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে।

ফলে মন্দা বাজারে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ পরিশোধের তাগিদ দিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। অব্যাহত দরপতন থামলেও প্রতিদিনই নতুন করে মূলধন হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে অব্যাহত দরপতনে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে চাপের মধ্যে রেখেছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের ব্যক্তিগত ঋণ, নেটিং ও শাখাগুলোর লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংককে চিঠি দিয়ে চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ঋণের (নেগেটিভ ইক্যুইটি) তথ্যও চাওয়া হয়েছে। এতে ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকাররা ক্ষুব্ধ। ফলে বাধ্যতামূলক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিনিয়োগকারীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

ব্রোকাররা বলছেন, তারা নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় ঋণের প্রতিবেদন স্টক এক্সচেঞ্জকে দিয়ে থাকে। কিন্তু চলমান মন্দা পরিস্থিতিতে এ চিঠি দেয়া দুঃখজনক। কারণ এখানে প্রতিনিয়ত সূচক কমছে। ফলে ঋণের তথ্য সঠিকভাবে হিসেবও করতে পারছে না। বাজারের এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা করে ফোর্সড সেল করতে চাচ্ছে না তারা।

জানা গেছে, যেসব ব্রোকারেজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংক প্রান্তিক ঋণ (মার্জিন লোন) দিয়ে থাকে. তাদের জন্য এই মুহুর্তে নেগেটিভ ইক্যুইটি রিপোর্ট তৈরি করা খুবই কঠিন। কারণ প্রতিদিন সূচক কমছে। ফলে শেয়ারের দামও নিয়মিত কমছে। ফলে একদিন পরেই আর সেই তথ্য পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। গত ৩ জুলাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মনিটরিং অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্ট থেকে সর্বশেষ চিঠি দিয়েছে সব ব্রোকারেজ হাউজ ও স্টেক হোল্ডারদের।

চিঠিতে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য বলা হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) থেকে গত ৮ জুলাই আরেকটি চিঠি দেয়া হয়। সেখানেও গ্রাহকদের ব্যক্তিগত ঋণের তথ্য, নেটিং এবং ব্রোকারেজ হাউজের শাখা অনুযায়ী লেনদেনের তথ্য চেয়েছে।

আজম সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারী নাইম বলেন, বাজারে যখন ভালো ছিল, তখন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণ নেয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর এখন বাজারের মন্দাভাবের সময় তারা আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। প্রতিনিয়তই ঋণের টাকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

ব্রোকাররা বলছেন, এসব তথ্য চাইলে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আর ব্রোকারেজ হাউজগুলো নিয়মিত এসব তথ্য দিয়েও থাকে। কিন্তু বাজারের এই কঠিন সময়ে এ ধরণের চাপ প্রয়োগকে তারা খুব দুঃখজনকভাবে দেখছেন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বাজারে মানি সাপ্লাই না থাকাতে পরিস্থিতি এমনিতেই খারাপ। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেল শুরু হয়েছে। এটা খুবই স্বাভাবিক। এমন চলতে থাকলে বিনিয়োগকারী ফোর্সড সেলের মুখ পড়বে। তাই সংশ্লিষ্টদের এখনই বাজারের প্রতি নজর দেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে ডিএসই’র দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মতিন পাটোয়ারি বলেন, আমি এসব বিষয় এখনো কিছু জানি না। চিঠির বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি দায়িত্ব নেয়ার আগেই যেহেতু চিঠি গিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।