দেশ প্রতিক্ষণ, রংপুর: এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর সদর আসনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জাতীয় পার্টি ছাড়াও গত নির্বাচনের ১৬ প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী আওয়ামী লীগের ৯ প্রার্থী ও গত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৭ প্রার্থী। ইতোমধ্যেই তারা সরব হয়ে উঠেছেন। তারা এই আসনটিতে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে চান না।

এদিকে এরশাদের অবর্তমানে সদর আসনটি জাতীয় পার্টি ধরে রাখতে পারবে কিনা এ নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনে জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র দুটি আসন। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান পেয়েছেন একজন।

এরশাদ ১৯৯১ সালে রংপুর সদর- ৩ আসন থেকে প্রথম বারের মত এমপি নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি জেলে ছিলেন। তখন থেকে সদর আসনটি এরশাদের দখলে। ১৯৯৬ সালে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে ২১টিতেই জয় পায় জাতীয় পার্টি। এরপর থেকে দলটির আসন সংখ্যা শুধু কমেছে। শুধু সংসদ এবং উপজেলা নির্বাচনই নয়, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। রংপুরের ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিতেছে।

তাই এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুরে জাতীয় পার্টি আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিগত উপজেলা নির্বাচনে রংপুরের গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, মিঠাপকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নিজেদের কোনো প্রার্থীই দিতে পারেনি জাতীয় পার্টি।

গুরুত্বপূর্ণ সদর আসনে প্রার্থী দিলেও সরকার দলীয় প্রার্থীর সাথে সুবিধা করতে পারেনি। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নিকট অনেক ভোটের ব্যবধানে হেরেছে জাপা প্রার্থী। শুধু পীরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এরশাদের অবর্তমানে দলটি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য রংপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ৯ জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও প্রাক্তন মহিলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক রোজি রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক লতিফা শওকত, রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক নাসিমা জামান ববি,

সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কর্মাসের প্রেসিডেন্ট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন ও জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান টুটুল। সে সময়ে তারা সকলেই আশাবাদি ছিলেন- নৌকা প্রতীক পেলে তারা বিজয়ী হবেন। এরশাদের শূন্য হওয়া এই আসনে তাদের অনেকেই এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির নেতা আসাদুজ্জামান, মমিনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন জানান, রংপুর সদর আসন এরশাদের মূলঘাঁটি। এখানে কোন দলই সুবিধা করতে পারবেনা। দলীয়ভাবে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে পার্টি তার পক্ষেই কাজ করবে। দলের চেয়ারম্যনের অবর্তমানে জাতীয় পার্টি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এটাই আমাদের বিশ্বাস।

বিগত সংসদ নির্বাচনে এরশাদ ছাড়াও পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান রিটা রহমান (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট-ধানের শীষ), আমিরুজ্জামান পিয়াল (ইসলামী আন্দোলন-হাতপাখা), সাব্বির আহম্মেদ (পিডিপি-বাঘ), আনোয়ার হোসেন বাবলু (বাসদ-কোদাল), আলমগীর হোসেন আলম (জাকের পার্টি-গোলাপ ফুল), তৌহিদুর রহমান মন্ডল (খেলাফত মজলিস-দেওয়াল ঘড়ি) ও ছামসুল হক (এনপিপি-আম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা এবারও এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য চৌধুরি খালেকুজ্জামান বলেন, আমি ৩ বার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু জোটগত কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আশাকরি এবার এই আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী দেওয়া হবে। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এখানে নৌকা প্রতীকের বিকল্প নেই।

মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সদর আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে আছে। এই আসনে এবার নৌকার প্রার্থী দেওয়া হবে। আশা করি নৌকাই এখানে বিজয়ী হবে।

সদর আসন রংপুর মেট্রোপলিটন সিটি ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ১শ ৪৯ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৭শ ১৫ জন এবং পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৪শ ৩৪ জন।