দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পর্যবেক্ষণের পর বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেছে বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী। তারা বাজারে শেয়ার বিক্রির চেয়ে বেশি পরিমাণে কিনছে। জুন মাসের পুঁজিবাজারের লেনদেন বিশ্লেষণ করে এমনটি জানা গেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশ আকর্ষণীয় হওয়ায় বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বর্তমান পুঁজিবাজার বিনিয়োগের উপযোগী বলে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের পুঁজিবাজার নতুন করে উপস্থিত হচ্ছে।

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর হাতের নাগালে রয়েছে, যে কারণে প্রবাসীদের এই মার্কেটের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে এবং বাড়ছে শেয়ারবাজারের লেনদেন ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদর। বিনিয়োগযোগ্য প্রেক্ষিতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করছেন। আবার লাভে থাকা শেয়ার বিক্রিও করেছেন।

তবে তবে টাকার অঙ্কে জুনে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে গ্রামীণফোনে। কোম্পানিটিতে বিদেশিদের শেয়ার ১৭ লাখ ৫৫ হাজার বেড়েছে, যার বাজারমূল্য অন্তত ৬৪ কোটি টাকা। নতুন বিনিয়োগে এ কোম্পানিতে বিদেশিদের শেয়ার মোটের শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এ হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল স্কয়ার ফার্মা। কোম্পানিতে বিদেশি বা প্রবাসীদের শেয়ার মোটের শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ বা সাত লাখ ৮৯ হাজারটি বেড়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২১ কোটি টাকা। জুন শেষে এ কোম্পানিতে বিদেশিদের শেয়ার মোটের ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকে বিদেশিদের শেয়ার সোয়া ১৭ লাখ বেড়েছে, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা। চতুর্থ অবস্থানে থাকা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজে বেড়েছে তিন লাখ ৩৬ হাজার শেয়ার, যার বাজারমূল্য প্রায় আট কোটি টাকা। পঞ্চম অবস্থানে থাকা মুন্নু সিরামিকে বিদেশিরা বিনিয়োগ করেছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। শেয়ার বাড়লেও মুন্নু সিরামিক ছাড়া বাকিগুলোর শেয়ারদর কমেছিল।

এছাড়া চলতি বছরের মে মাসের শেষেও চামড়াজাত পণ্য খাতের কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যারে বিদেশি কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশিদের শেয়ার ছিল প্রায় আট লাখ। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মধ্যে এর অংশ ৬ দশমিক ১২ শতাংশ।

গত মাসের শেষ দিনের হিসাবে এসব শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল সাড়ে ১০ কোটি টাকারও বেশি। তবে জুনের শেষে কোম্পানিটির দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, বিদেশি বা প্রবাসীরা আর কোনো শেয়ার ধারণ করছেন না।

কোম্পানিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের নামে দেখানো শেয়ার গত মাসে বিক্রি হয়েছে, যার পুরোটা গেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের (পাবলিক) হিসাবে। তালিকাভুক্ত ৩১৭ কোম্পানির মধ্যে ৩০৮টির প্রকাশিত শেয়ার ধারণের হার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৩৭ কোম্পানি থেকে বিদেশি বা প্রবাসীদের শেয়ার কমেছে। এর মধ্যে লিগ্যাসি ছিল শীর্ষে।

বিদেশি বিনিয়োগে এর বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে জুনের পরিসংখ্যানে। গত মে মাস পর্যন্ত বীমা খাতের কোম্পানি প্যারামাউন্টে বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কোনো শেয়ার ছিল না। জুন শেষে কোম্পানিটিতে বিদেশিদের শেয়ার মোটের ৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

সংখ্যার হিসাবে যা ছিল ১৩ লাখ ৩৮ হাজার। এগুলোর গড় বাজারমূল্য পৌনে তিন কোটি টাকা। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ছাড়া তালিকাভুক্ত মোট ১৯ কোম্পানিতে বিদেশি বা প্রবাসীদের শেয়ার বেড়েছে। এসব কোম্পানিতে এদের শেয়ার বেড়েছে সংশ্নিষ্ট কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় শূন্য দশমিক ০১ থেকে শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ।

বেড়েছে : মোট শেয়ারে শতাংশের বিচারে গত এক মাসে বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সে বিদেশিদের শেয়ার অনেক বাড়লেও জুনে শেয়ারটির দরে এর ইতিবাচক প্রভাব ছিল না। উল্টো মে মাসের শুরুর তুলনায় সোয়া ৫ শতাংশ দর হারিয়েছে। শেয়ার ধারণ বাড়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা মুন্নু সিরামিকে বিদেশিদের শেয়ার শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ বা ৩ লাখ ২০ হাজার বেড়ে মোটের ১ দশমিক ০৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

যার গড় বাজারমূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। গত মাসে শেয়ারটির দর প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছিল। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সে এক লাখ ২৮ হাজার শেয়ার বা মোটের শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটির শেয়ারদর সাড়ে ৩ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে চলতি মাসের প্রথমার্ধে (১-১৫ জুলাই) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লেনদেন ১৪ শতাংশ বেড়েছে। আগের মাসের শেষার্ধের তুলনায় (১৬-৩০ জুন) এই লেনদেন বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, জুলাই মাসের প্রথমার্ধে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ৩১৩ কোটি ৯ লাখ ১০ হাজার শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় করেছেন। যার পরিমাণ আগের মাসের শেষার্ধে ছিল ২৭৫ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

অর্থাৎ এক পক্ষের ব্যবধানে ডিএসইতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লেনদেন ৩৭ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা বা ১৩.৬৪ শতাংশ বেড়েছে।