দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য বেশ কিছু সুসংবাদ দিয়েছেন সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য কৃষি বীমা এবং গবাদি পশুর বীমা চালুর প্রস্তাব করা হয়। অন্যদিকে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত গ্রুপ বীমার পরিবর্তে সমন্বিত জীবন বীমা এবং প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা চালু রাখা হয়েছে। আর বীমা সংক্রান্ত এসব সিদ্ধান্ত বিশেষ চমক বলে উল্লেখ করে বাজার সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য চারটি সুসংবাদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য শস্য বীমা ও গবাদি পশুর বীমা চালু এবং জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত গ্রুপ বীমার পরিবর্তে সমন্বিত জীবন বীমা ও প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা চালু।

বীমা খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শস্য বীমা ও গবাদি পশুর বীমা চালু করা হলে সাধারণ কোম্পানিগুলোর কর্মকান্ড বড় আকারে সম্প্রসারিত হবে এবং কোম্পানিগুলোর আয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে। এতে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর কর্মকান্ড দেশব্যাপী সম্প্রসারিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত গ্রুপ বীমার পরিবর্তে সমন্বিত জীবন বীমা ও প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা চালু করা হলে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পরিধিও অনেক বিস্তৃত হবে।

এদিকে বীমা শিল্পের অনেক সম্ভাবনা থাকলেও যথাযথভাবে এর বিকাশ ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘এটা নিশ্চিতভাবে বোঝা যায়, বীমা শিল্পে অনেক সম্ভাবনা আছে, কিন্তু আমরা ট্রেপ করতে পারছি না। হয়তো প্রোপার অ্যাড্রেস (যথাযথভাবে চিহ্নিত বা উন্নয়ন) করতে পারছি না।’ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটে বীমা শিল্পের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কিত গোল টেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

আলোচনায় বক্তারা জানান, চলতি বাজেটে বীমা শিল্পের প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে সরকারের পক্ষে সবার জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালুর আশ্বাস, স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে শস্য বীমা চালু, বীমা শিল্পের আধুনিকায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষুদ্র বীমা চালু, জীবন বীমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বীমার আওতায় নিয়ে আসা, এ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন এবং সার্ভেয়ার ফি কর হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা। তবে বীমা সংশ্লিষ্টরা আলোচনায় বলেছেন, এগুলো যথেষ্ট নয়।

এদিকে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন প্রদানের বিধান বাস্তবায়ন হলে দেশের নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর বছরে আয় বাড়বে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের অনুসন্ধানে এমনই চিত্র উঠে এসেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে কমিশন ব্যয় দেখানো হয় ১৫ শতাংশ। তবে ব্যবসা সংগ্রহ করতে কোম্পানিগুলো কমিশন বাবদ ব্যয় করে থাকে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ। সে হিসাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্ধারিত ১৫ শতাংশ কমিশন বাদ দিলে সর্বনিম্ন ৩৫ শতাংশ অবৈধ কমিশন ব্যয় করে বীমা কারীরা। এই ৩৫ শতাংশ কমিশন বন্ধ করা গেলে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা আয় বাড়বে দেশের নন-লাইফ বীমাখাতে।

আইডিআরএ’র তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে দেশের ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানি সর্বমোট ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করে। এর আগে ২০১৭ সালে এই প্রিমিয়াম আয় ছিল ২ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বিআইএ’র তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয় ছিল ২ হাজার ৫৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর ২০১৫ সালে এই প্রিমিয়াম আয় ছিল ২ হাজার ৪৩০ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

তথ্য অনুসারে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নন-লাইফ বীমাখাতে সর্বমোট প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ১১ হাজার ৩শ’ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে এই ৪ বছরে গড় প্রিমিয়াম আয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৮২৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

হিসাব অনুসারে, নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর বাৎসরিক গড় প্রিমিয়াম আয়ের ৩৫ শতাংশ তথা ৯৮৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় হয় অবৈধ কমিশন বাবদ। কোম্পানিগুলোর ব্যয়িত কমিশনের ৩৫ শতাংশ অবৈধ ধরে এই হিসাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, নন-লাইফ খাতের এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ কমিশন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ এবং মূখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বিআইএফ। একই সঙ্গে আইডিআরএ’র সার্কুলার নং- নন-লাইফ ৬২/২০১৯ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট, ২০১৯) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

সূত্র মতে, নন-লাইফ বীমাখাতে কমিশন হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২০১২ সালের এপ্রিলে। গেল বছরের ৪ মার্চেও এক চিঠিতে ১৫ শতাংশ কমিশন দেয়া সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেয়া হয়।

ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নন-লাইফ বীমাখাতে কমিশন ব্যয়ের সীমা নিয়ে ২০১২ সালের এপ্রিলে কর্তৃপক্ষের জারিকৃত সার্কুলার নম্বর- নন-লাইফ-৩২/২০১২ ও একই বছরের সেপ্টেম্বরে জারিকৃত নন-লাইফ-৩৪/২০১২ নম্বর সার্কুলারের যথাযথ প্রতিপালন ও অনুরসণ করা হচ্ছে না।

সার্কুলার নং নন-লাইফ-৩২/২০১২ অনুসারে, বাংলাদেশে নন-লাইফ বীমা পলিসি ইস্যু করার ক্ষেত্রে কোন বীমাকারী পরিশোধযোগ্য প্রিমিয়ামের পনের শতাংশের (১৫%) অধিক কমিশন অথবা অন্য কোন প্রকার পারিশ্রমিক কোন বীমা এজেন্টকে প্রদান অথবা প্রদানের চুক্তি এবং কোন বীমা এজেন্ট পরিশোধযোগ্য প্রিমিয়ামের ১৫ শতাংশের অধিক কমিশন অথবা অন্য কোন প্রকার পারিম্রমিক গ্রহণ করতে পারবে না।

বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কৃষি ও গবাদি পশুর বীমা চালু করা হলে সাধারণ কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড ব্যাপক আকারে সম্প্রসারিত হবে। কেননা দেশের উৎপাদনশীল কৃষি পণ্য ও গবাদি পশু বীমার আওতায় আসলে কৃষক ও খামারিরা যেমন নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। তেমনি বীমা কোম্পানিগুলোর আয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে।

এতে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড দেশব্যাপী সম্প্রসারিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত গ্রুপ বীমার পরিবর্তে সমন্বিত জীবন বীমা ও প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা চালু করা হলে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পরিধিও অনেক বিস্তৃত হবে।