দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী রেখে উচ্চতর হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মূদ্রানীতি ঘোষনা করেছে। অর্থবছরের সাথে মিল রেখে একবছর মেয়াদি মূদ্রানীতি প্রণীত হওয়ায় মূদ্রানীতি এবং বাজেট ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় থাকবে বলে এফবিসিসিআই মনে করে। তবে উচ্চতর প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে ব্যবসা-বান্ধব ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য এফবিসিসিআই আহ্বান জানাচ্ছে।

ঘোষিত মূদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪.৮ শতাংশ। যেখানে পূর্ববর্তী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নির্ধারিত ছিল ১৬.৫ শতাংশ। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। সহজলভ্য ঋণ প্রবাহ ছাড়া কাঙ্খিত বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন সম্ভব নয়।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়ায় এ খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত হতে পারে, যা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্ত করবে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারনে বেসরকারি খাতে ঋনপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও বিনিয়োগের স্বার্থে এ খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করা সংগত নয় বলে এফবিসিসিআই মনে করে।

অন্যদিকে ঘোষিত মূদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে ২৪.৩ শতাংশ করা হয়েছে যেখানে গত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০.৯ শতাংশ। সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি করায় তা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে উৎপাদনশীল খাত বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বেসরকারি খাতের জন্য এফবিসিসিআই ঋণের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি সংকুলানের সুযোগ রাখার আহ্বান জানাচ্ছে।

ঘোষিত মূদ্রানীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে মনিটরিং জোরদার করার জন্য এফবিসিসিআই আহ্বান জানাচ্ছে। জাতীয় উচ্চতর প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ব্যাংকে এক অংকের (সিঙ্গেল ডিজিট) সুদহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে এফবিসিসিআই মনে করে। এখনো প্রায় সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুদের হার এক অংকের ওপরে রেখেছে। এফবিসিসিআই মনে করে, শিল্পায়নের স্বার্থে সকল বানিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণের সুদের হার অবিলম্বে এক অংকে নামিয়ে আনবে।

ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোন (NPL) বা খেলাপি ঋণের বিষয়টি একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ন বিষয়, দীর্ঘদিন যাবৎ এ দুর্বিসহ বোঝা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরো দক্ষ এবং বিনিয়োগবান্ধব করতে খেলাপি ঋণ কমানোর প্রচেষ্টা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরো জোরদার করা প্রয়োজন।

সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরনের ধারাবাহিকতায় দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সম্পূর্ন ডিজিটালাইজড এবং পেপারলেস ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছ, যুগোপযোগী ও আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং ও সুপারভিশনকে আরও নিবিড় ও জোরদার করার জন্য এফবিসিসিআই আহ্বান জানাচ্ছে।