দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার গত বছরের নভেম্বর থেকে তরতর করে বাড়ছে। তবে স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করার নতুন নতুন বিনিয়োগকারীরা আসছেন। তবে অধিকাংশ নতুন বিনিয়োগকারী না জেনেশুনে বিনিয়োগ করে। ফলে লোকসান খেয়ে ফের বাজার বিমুখ হয়ে পড়েন। এজন্য বিনিয়োগকারীদের আগে জানতে হবে শেয়ারে বিনিয়োগের কিছু খুটিনাটি বিষয়।

কীভাবে শেয়ারে বিনিয়োগ করে মুনাফা করা যায়। তবে এজন্য বেশি পড়াশুনার দরকার নেই। তবে বুঝতে হবে কোম্পানির প্রোফাইল। কোম্পানির বর্তমান অবস্থা কী। সামনে কী আরো ভালো হবে না খারাপের দিকে যাবে। এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আপনাকে শেয়ার ব্যবসায় আগাতে হবে। তবে অদ্ভূত একটা ব্যাপার হলো, শেয়ার মার্কেটে অনেকেই এ গল্প জানা সত্ত্বেও সব টাকা দিয়ে একটা শেয়ার কিনে বসে থাকেন।

আপনি যত অভিজ্ঞ এবং জ্ঞানী হউন না কেন, কোনো একটা শেয়ার নিয়ে আপনার প্ল্যানিং বাস্তব রূপ দেখতে নাও পারেন। কী হবে তখন? এজন্যই একাধিক কোম্পানির শেয়ার যাচাই করে কেনা উচিৎ। ফলে একটাতে লস হলেও বাকিগুলোর লাভ আপনার বিনিয়োগের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, কী ধরনের শেয়ার কিনবেন? কোন সেক্টরের শেয়ার কিনবেন? সব টাকা দিয়ে ব্যাংক সেক্টর? এনার্জি নাকি সিমেন্ট? নাহ! তাহলে আবারও একই ঝুড়িতে ডিম রাখার মতো এক সেক্টরেই সব টাকা ঢেলে দিচ্ছেন। বুঝতেই পারছেন, একাধিক সেক্টর থেকে একাধিক কোম্পানি বেছে নিতে হবে। কাজটা আসলে খুব সহজ। চলুন তাহলে দেখে নেই আপনার নিজের পোর্টফলিওটাকে সাজানোর জন্য সহজ উপায়গুলো।

পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট গাইডঃ শেয়ারে বিনিয়োগ লাভ দুইভাবে সম্ভব। এক হচ্ছে ডিভিডেন্ড, আরেক হচ্ছে শেয়ারের দাম বাড়া। আপনার আসলে দুইটাই দরকার। কারণ প্রতিবছর কিছু শেয়ার থেকে ভাল ডিভিডেন্ড পেলে আপনার হাতে নগদ টাকা বা বোনাস শেয়ার আসবে। এ টাকা আপনি লাভ হিসেবে তুলে নিতে পারেন, খরচ করতে পারেন, আবার নতুন করে বিনিয়োগও করতে পারেন। এ শেয়ারগুলোর নাম ভ্যালু শেয়ার।

অন্যদিকে এমন কিছু শেয়ার দরকার যার দাম কয়েকগুণ বেড়ে গিয়ে আপনার পোর্টফলিওর চেহারাই পাল্টে দেবে। এ শেয়ার থেকে লাভ আপনি করবেন যখন শেয়ারটি বিক্রি করার সময় আসবে (অর্থাৎ শেয়ারটি Overpriced হয়ে যাবে)। এ শেয়ারগুলোর নাম গ্রোথ শেয়ার।

চলুন দেখে নেই ভ্যালু এবং গ্রোথ শেয়ার চেনার সহজ উপায়গুলো: ভ্যালু শেয়ার খুঁজে বের করার জন্য দেখে নিন কোন কোম্পানিগুলোর PE Ratio কম কিন্তু প্রতিবছর ভালো ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। এখন হিসেবে আনুন Dividend Yield. ফর্মুলা খুব সহজ।

মনে করুন একটি কোম্পানি ২০% ডিভিডেন্ড দিয়েছে। শেয়ারটির ফেসভ্যালু ১০ টাকা এবং মার্কেট প্রাইস ১৫ টাকা। তাহলে শেয়ারটির Dividend Yield হল (ডিভিডেন্ড % × ফেসভ্যালু) ÷ (মার্কেট প্রাইস × ১০০) = ১৩.৩৩% অর্থাৎ প্রতিবছর আপনার বিনিয়োগ করা টাকার উপর ১৩.৩৩% হারে লাভ করছেন! একটু দেখে নিন ব্যাংকে টাকা রাখলে কত পারসেন্ট দেবে- গ্রোথ শেয়ার চেনার টেকনিকগুলোও অনেক সহজ।

আগেই দেখেছেন, গ্রোথ শেয়ার কেনার উদ্দেশ্য হল এর মার্কেট প্রাইস ভবিষ্যতে কয়েকগুণ হবে, আর তা বিক্রি করে আপনি লাভ তুলে নেবেন। শেয়ারের দাম কয়েকগুণ হতে গেলে কোম্পানির ব্যবসার সাইজ এবং নেট প্রফিট এই সবকিছুই কয়েকগুণ হতে হবে। আসুন দেখে নেই গ্রোথ কোম্পানিগুলো চেনার সহজ কিছু টেকনিক।

* কোম্পানির ব্যবসা ক্রমাগত বাড়ছে * কোম্পানির EPS বাড়ছে * কোম্পানির Net Profit Margin বাড়ছে * কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট ভাল

* কোম্পানিটি প্রায় একচেটিয়া ব্যবসা করে (প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক ভাল) তো আজকে ভ্যালু শেয়ার আর গ্রোথ শেয়ার চেনার প্রাথমিক ধারণা পেলেন। তাই পোর্টফলিও সাজানোর বেস্ট উপায় এ দুই ধরনের শেয়ার একসঙ্গে মিলে করেই। এতে করে বিনিয়োগ নিরাপদ রেখেও লাভ করতে পারবেন।