দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড.এম খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি স্বার্থন্বেষী মহলের সঙ্গে যোগসাজশ করে আইপিওর অনুমোদন ও বিদেশে অর্থ পাচারের যে অভিযোগ উঠেছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএসইসি। আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি এই অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছে।পাশাপাশি এই অভিযোগ উত্থাপনের বিষয়টিকে বিএসইসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপতৎপরতা বলে অভিহিত করেছে।

উল্লেখ, গত বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিএসইসি চেয়ারম্যান সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগের সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়।আজ বৃহস্পতিবারও কয়েকটি সংবাদপত্র এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। খবরে বলা হয়, দুদক বিএসইসির গোষ্ঠীর যোগসাজশে দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন করিয়ে শেয়ার বাজারে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করার অভিযোগ তদন্তে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। এসব খবরের প্রেক্ষিতে আজ আলোচিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করে বিএসইসি।

বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে দুদকের তদন্তের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি। বরং পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে বিএসইসির নেওয়া নানা কঠোর সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহকে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়।এতে এক বা একাধিক সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কোনো ভিত্তিহীন অভিযোগ করলেই তা প্রমাণিত বলে ধরে নেওয়া যায় না।

আইপিও অনুমোদন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে এতে বলা হয়, কোনো দেশের পুঁজিবাজারের প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির সরবরাহ নিশ্চিত করা।আইপিওসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানসমূহ পুঁজিবাজার হতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে থাকে।কমিশন নিজ উদ্যোগে যেমন কাউকে পুঁজিবাজারে অর্থ উত্তোলনের জন্য বাধ্য করে না।

একইভাবে কোন বিনিয়োগকারীকেও প্রঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করে না। আগ্রহী ইস্যুয়ার প্রতিষ্ঠানসমূহ ইস্যু ম্যানেজারের সহায়তায় পাবলিক ইস্যুর জন্য আবেদন করলে কমিশন প্রযোজ্য আইন অনুসরে শর্ত পূরণ করছে কিনা,প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি দাখিল করছে কিনা এবং সকল তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে কিনা তা বাছাই করে।বিধি মোতাবেক সকল শর্ত পূরণ সাপেক্ষেই শুধুমাত্র পুঁজি উত্তোলনের অনুমোদন প্রদান কার হয়ে থাকে।

এতে আরও বলা হয়, ইস্যু (আইপিও)অনুমোদনের ক্ষেত্রে কমিশন কোনো মূল্য নির্ধারণ করে না এবং ইস্যুকৃত সিকিউরিটিজের ভবিষ্যত মূল্য কি হবে তার নিশ্চয়তাও প্রদান করে না।সারা বিশ্বের পুঁজিবাজারে বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী কমিশন তথ্য প্রকাশ এবং বিদ্যমান আইনের ভিত্তিতে ইস্যু অনুমোদন করে থাকে।

চেয়ারম্যান একা কোনো আইপিও অনুমোদন দেন না।সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দায়িত্ব প্রাপ্ত কমিশনারের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ প্রেরণের পরে চেয়ারম্যান কমিশনে উপস্থাপনের নির্দেশনা দিলে কমিশন সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে অনুমোদন দেয়া হয়।কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকির কি সম্ভাবনা আছে তা যাচাই বাছাই করে বিনিয়োগকারীগণ যেন জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে পারেন সে জন্য প্রসপেক্টাসে কোম্পানি এবং এর ব্যবসা সংক্রান্ত সকল তথ্য সন্নিবেশিত হয়।

এ সকল তথ্য যথাযথ আছে কিনা তা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব ইস্যুয়ার,নিরীক্ষক,ইস্যু ম্যানেজার,ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিসহ বিভিন্ন পক্ষের। কোনো দেশের কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাই প্রসপেক্টাসে সন্নিবেশিত তথ্যের সঠিকতা নিরূপণ করে না।দাখিলকৃত কাগজপত্রের ভিত্তিতে প্রসপেক্টাসে সকল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কমিশনের।

কমিশন ও এক্সচেঞ্জে আইপিও আবেদনের সাথে সাথেই কোম্পানির ওয়েবসাইটে খসড়া প্রসপেক্টাস প্রকাশ করা হয়ে থাকে।যা সকলের জন্য উন্মুক্ত।কোনো আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের আবেদন যদি ৬৫ শতাংশের কম হযে থাকে,তবে আইপিওটি বাতিল হয়ে যায়।আর ৬৫ শতাংশের উপরে কিন্তু ১০০ শতাংশের নিচে হলে,অবলেখক প্রতিষ্ঠানসমূহ অবশিষ্ট অংশ ক্রয় করে।

তবে বিগত ১০ বছরের আইপিওর আবেদন বিশ্লেষণে ৭৮ গুন (বা ৭৮০০ শতাংশ)পর্যন্ত অধিক হারে জমা হয়েছে।এখন পর্যন্ত কোনো আইপিও লেনদেন শুরুর সময় ইস্যু মূল্যের নিম্নে ছিল না।সেখানে অন্যান্য দেশে অনেক কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরুর দিনেই ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যায়। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে ২০১৭ সালে ২৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরুর দিনে ইস্যু মূল্যের নিচে ছিল,আর ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩৬ শতাংশ। আলিবাবা,ফেসবুক,উবারসহ অন্যান্য অনেক স্বনামমধন্য কোম্পানির ক্ষেত্রেও এই ঘটনা ঘটেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বিগত ১০ বছরে আইপিওর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত ৮৮টি কোম্পানির মধ্যে ৯টির শেয়ারের বর্তমান বাজার দর অভিহিত মূল্যের নিম্নে। যা এই সময়ে মোট ইস্যুর মাত্র ১০ শতাংশ।যেখানে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এর পরিমাণ ৬১ শতাংশ।পরবর্তীতে সেকেন্ডারি মার্কেটে কোন শেয়ারের দর কি হবে তা নির্ধারিত হয় যোগান এবং চাহিদার ভিত্তিতে। কমিশনের এ ক্ষেত্রে কিছুই করণীয় নেই।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কমিশনের কাজ বাজারে অনিয়ম বা কারসাজি হলে তা শনাক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে।কমিশনের চেয়ারম্যান,কমিশনার এবং কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বা লেনদেন নিষিদ্ধ থাকায়, চেয়ারম্যান বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে কোনো বিও হিসাব নেই এবং তালিকাভুক্ত বা অ-তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানিতে কোনো ধরণের বিনিয়োগ নেই।

কোম্পানিসমূহ আইপিওর মাধ্যমে যে অর্থ উত্তোলন করে থাকে,তার প্রতিটি টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে তা প্রসপেক্টাসে প্রকাশ করা হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে উক্ত অর্থ ব্যবহারেরর প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে হয়।কাজেই আইপিওর অর্থ আত্মসাৎ বা লুটপাটের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।