দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: লিবরা ইনফিউশনের উৎপাদন বন্ধের মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিবরা ইনফিউশনের এলসি বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ করে রাখা হয়েছে-এমন বক্তব্য দিয়ে গত ২৬ আগস্ট বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লিবরা ইনফিউশন।

আর এই বিজ্ঞপ্তি সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক,বাস্তব অবস্থার পরিপন্থি এবং কোম্পানিটি প্রকৃত সত্য আড়াল করেছে বলে পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মতিঝিল করপোরেট শাখার গ্রাহক লিবরা ইনফিউশন লিমিটেডের নিকট বিনিয়োগের বিপরীতে ২৭ আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত সর্বমোট ১০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা পাওয়া রয়েছে।

উক্ত বিনিয়োগের বিপরীতে কোম্পানির ১৬৯ শতাংশ ভূমিসহ ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৩ বর্গফুট বিল্ডিং সহায়ক জামানত হিসেবে ব্যাংকের নিকট বন্ধক ও আমমোক্তারনামা সম্পাদন এবং পরবর্তীতে কোম্পানির ফিক্সড অ্যান্ড ফ্লোটিং এ্যাসেট এর উপরে রেজিষ্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মসে ব্যাংকের অনুক‚লে চার্জ সম্পাদন করা হয়।

উক্ত গ্রাহক সঠিকভাবে ব্যবসা-পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় স্বীকৃত মঞ্জুরীপত্রের শর্ত অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় বিনিয়োগ দায় অনিয়মিত হয়ে পড়ে। গ্রাহক দায় পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপী হয়ে পড়লে তার খেলাপী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে তালিকাভুক্ত হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৭ কক ধারা মোতাবেক, “খেলাপী গ্রাহকের অনুক‚লে কোন ঋণ সুবিধা প্রদান করা যায় না”।

পরবর্তীতে গ্রাহক ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে আন্তরিক না হয়ে মিথ্যা দাবী ও উক্তিতে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৫৭ কোটি টাকার একটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন এবং ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগে ফৌজদারী মোকদ্দমা দায়ের করে এবং ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি ধমকি দিতে থাকে। ব্যাংক পরবর্তীতে খেলাপী গ্রাহকের বিরুদ্ধে দায় আদায়ের নিমিত্তে প্রচলিত আইনে মামলা-মোকদ্দমা দায়ের করে।

পরবর্তীতে ব্যাংক, গ্রাহকের ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার্থে বৃহত্তর জনস্বার্থে বিগত ১ আগস্ট ২০১৮ তারিখে উভয় পক্ষের মধ্যে সোলেনামা ও আপোষনামার ভিত্তিতে শর্ত সাপেক্ষে চলমান মামলা মোকদ্দমা প্রত্যাহারসহ বিনিয়োগ দায় ৯৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ২ বছর গ্রেড পিরিয়ডসহ ১২ বছর মেয়াদ পরিশোধের শর্তে আদালত কর্তৃক সোলেডিক্রি মূলে শর্তসাপেক্ষে পুন:তফসিল করা হয়।

সোলেনামা ও আপোষনামার শর্ত মোতাবেক ব্যাংক গ্রাহকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করলেও উক্ত গ্রাহক ব্যাংকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা এখনও প্রত্যাহার করেনি।

গ্রাহক বিজ্ঞ আদালতে দাখিলকৃত সোলেনামার শর্ত পরিপন্থী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দাবী করে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের নিকট পত্র প্রদান করেন। তৎপরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রচলিত ব্যাংকিং নিয়ম ও বিধি পরিপন্থী সুযোগ-সুবিধা প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক এলসি (ঋণপত্র) বন্ধের অভিযোগ সত্য নয়।

বরং বারবার লিখিত ও মৌখিক তাগাদা প্রদান করা সত্তে¡ও গ্রাহক নবায়ন মঞ্জুরীপত্রে এক্সেপটেন্স প্রদান ও মঞ্জুরীপত্রের শর্ত মোতাবেক ডকুমেন্টেশন সম্পাদন না করায় এলসি খোলা সম্ভব হয়নি। উল্লেখিত কার্যক্রম গ্রহনের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধান পরিপালন করা হয়েছে। গ্রাহক উক্ত বিষয়ে প্রকৃত সত্য আড়াল করে বিভ্রান্তিকর অসত্য তথ্য দিয়ে ব্যাংকের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে।

গ্রাহক আল-আলাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে তাদের চলমান বিনিয়োগ, ওয়ার্কিং ক্যাপিটালসহ অন্যান্য বিনিয়োগ সুবিধার বিপরীতে ব্যাংকের অনুক‚লে বন্ধক, আমমোক্তার নামা, চার্জ হাইপোথিকেশন ইত্যাদি প্রদান করায় গ্রাহকের ফিক্সড ও ফ্লোটিং সম্পত্তির উপর অত্র ব্যাংকের দাবীনামা প্রতিষ্ঠিত হয়।

উক্ত গ্রাহক একই বন্ধকতৃ ও চার্জকৃত সম্পত্তির উপর পারি-পাসু সৃষ্টির মাধ্যমে অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান/ব্যাংক থেকে আরও বিনিয়োগ গ্রহনের আবেদন করলে ব্যাংকের দায়ের তুলনায় গ্রাহকের সম্পদের মূল্য অপ্রতুল থাকায় ব্যাংকের পক্ষে ফ্লোটিং অ্যাসেটস এর উপর পারি-পাসু সৃষ্টির জন্য এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) দেয়া হয়।

তবে ব্যাংকের বিনিয়োগ ঝুঁকি বিবেচনায় এবং সম্মানিত আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যাংকের বিনিয়োগের বিপরীতে মর্টগেজ এবং চার্জকৃত সম্পূর্ণ জামানতের উপর অন্য ব্যাংক কর্তৃক পারি-পাসু চার্জ গ্রহনের লক্ষ্যে গ্রাহক কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনপত্রটি বিবেচনা করে এনওসি প্রদান করা যায়নি।

গ্রাহক বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে জনগনের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের অনৈতিক উদ্দেশ্যে বর্তমানে অতন্ত স্পর্শকাতর রোগ ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ার স্যালাইন প্রস্তুতের বিষয়টি উল্লেখ করে ব্যবসায়িক ন্যায় নীতির পরিপন্থী ও সুচতুরভাবে জনগনের অনুভূতিতে আঘাত হানার অপচেষ্টা করেছেন যা কোনভাবেই অনভিপ্রেত।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, গ্রাহক সোডিয়াম-এল-ল্যাকটেট ও ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেড পন্য আমদানীর নিমিত্তে যে এলসি খোলার জন্য আবেদন করেছে উক্ত মালামালসমূহ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে গ্রাহকের ওয়্যারহাউজে যথাক্রমে ১৯২ ড্রাম ও ৬১ মেট্রিক টন মজুত রয়েছে। যার দ্বারা উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী কমপক্ষে আগামী চার মাস উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।

এদিকে লিবরা ইনফিশন ব্যাংকের আমানতকারী, বিনিয়োগ গ্রহনকারী ও দেশের জনগনকে বিভ্রান্ত করে ব্যাংকের সুমান ক্ষুন্ন করে দেশের প্রচলিত আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। তাই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্রতিকার পেতে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ঔষুধ ও রসায়ন খাতের লিবরা ইনফিউশন লিমিটেড উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আল আরাফা ইসলামি ব্যাংক কোম্পানিটির ঋণপত্র বা এলসি (Letter of credit-LC) বন্ধ করে দেয়ায় কাচামালের অভাবে কোম্পানিটির ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু’র চিকিৎসায় ব্যবহৃত এবং কোম্পানির মূল পণ্য স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে লিবরা ইনফিউশন।

ব্যাংকটি নানা টালবাহানা করে কোম্পানিটিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেও সংবেদনশীল তথ্যে অভিযোগ করা হয়। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ইতিমধ্যে কোম্পানিটির সকল প্রকার কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানী এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অপারগতা জানিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।

সেই কারণে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া রোগের জীবনরক্ষাকারী স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়েছে লিবরা ইনফিউশন। কোম্পানিটির এমন বক্তব্যের পর পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।