এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। ব্যাংকের অলস টাকার গন্তব্য ছিল ব্যাংকবহির্ভূত এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)। গত প্রায় এক বছর ধরে তারল্য সংকটে ভুগছে ব্যাংকিং খাত। তাছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) তহবিলের ৬৭ শতাংশই আসে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে। পিপলস লিজিং অবসায়ন ঘোষণার পর থেকে ব্যাংকগুলো কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তহবিল জোগান বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে এ খাতে তারল্য সংকট ঘনীভূত হতে শুরু করেছে।

এ পরিস্থিতিতে নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি মার্কেট) অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় কলমানির সুদের হার ছয় শতাংশের ঘরে উঠে এসেছে, যা গত ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহার সময়ও দেখা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বুধবার কলমানির গড় (ভারিত) সুদহার ছিল ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সুদহার।

২০১৫ সালের অক্টোবরে কলমানি মার্কেটের গড় সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এরপর আর কখনও পাঁচ শতাংশের ওপর ওঠেনি কলমানির গড় সুদহার। গত ঈদুল ফিতরের সময়ও কলমানির গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত ঈদুল আজহার সময় কলমানির গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

যদিও এখনও ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) নেতারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স¤প্রতি বলেন, ‘এনবিএফআইগুলোর তহবিলের ৬৭ শতাংশ আসে ব্যাংকের কাছ থেকে। এর মধ্যে একটি অংশ সরাসরি আমানত হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রাখে ব্যাংকগুলো। একটি অংশ থাকে ব্যাংকের অর্থায়ন বা বিনিয়োগ হিসেবে। এছাড়া কলমানি মার্কেট থেকেও ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ধার করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।’ বাকি ৩৩ শতাংশ তহবিল আসে সরাসরি আমানত থেকে। এ আমানতের মধ্যে সিংহভাগই আসে (৩৩ শতাংশের ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট) বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও বলেন, ‘স¤প্রতি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড নামের আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন ঘোষণার পর থেকে ব্যাংকগুলো সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই তহবিল জোগান বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের কাছে প্রতিদিনই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ করছে যে, তারা তহবিল পাচ্ছে না।’ এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

বিএলএফসিএ’র চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংক এমনটি করছে না। কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে করছে। কেননা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকেরও গ্রাহক। ব্যাংক যখন জানতে পারে যে, তার একটি গ্রাহক টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তখন সে তো একটু সতর্ক হবেই। তবে পরিস্থিতি যতট খারাপ মনে হচ্ছে, ততটা খারাপ নয়। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।’