মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  বিশ্বব্যাপি ২০২৫ সালের মধ্যে ৮৫.৪ বিলিয়ন ডলার ডেনিম পণ্য বিক্রি হবে। তাই ডেনিমের বাজার ধরতে শতভাগ রফতানিমূখী রিং শাইন টেক্সটাইলস লি: এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে। এর জন্য তারা শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। তবে এর মধ্যে ডেনিম সুতা ও কাপড় তৈরির প্রয়োজনীয় মেশিনারিজে ৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ হবে।

এ বিষয়ে কোম্পানিটির জেনারেল ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পোষাক রফতানির ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসে ডেনিম কাপড় থেকে। বিশ্বব্যাপি এ পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই রফতানি বাণিজ্যে ডেনিমের বাজার ধরতে আমরা এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করছি। তবে বর্তমানে ভিয়েতনাম থেকে ডেনিম কাপড় সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়।

ব্যাংক থেকে ঋণ না করে শেয়ারবাজারে আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আধুনিক এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) নির্মাণে আমাদের ৩৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হয়েছে। আর এ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হয়েছে। তাই ডেনিম কারখানা নির্মাণে বিকল্প অর্থায়নের জন্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি হচ্ছি আমরা। এছাড়া ইপিজেডে থাকা কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে।

বর্তমান কর্মপরিবেশ নিয়ে কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমাদের কারখানায় ২ হাজারের অধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। ডেনিম কারখানা শুরু হলে সেখানে আরো ২০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। কারখানায় শ্রমিকদের সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। আর আমরা সময়মতো তাদের বেতন ভাতাও পরিশোধ করে দেই। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে শ্রমিকদের দুপুরের খাবার এবং বাসস্থানের কোন ব্যবস্থা নেই।

এ প্রসঙ্গে সিএফও বলেন, শ্রমিকদের জন্য কোন ক্যান্টিন না করা হলেও তাদেরকে দুপুরের খাবারের জন্য ৪৫ টাকা করে দেয়া হয়। এ টাকা শ্রমিকদের বেতনের সঙ্গেই দেয়া হয়। তবে তাদের বাসস্থানের কোন ব্যবস্থা আমাদের পক্ষ থেকে করা হয়নি।

রিং শাইন টেক্সটাইলসের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে গত ২৫ আগস্ট। চলবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলস আইপিওর মাধ্যমে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করবে। এজন্য ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছাড়বে তারা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৬৭৯তম কমিশন সভায় রিং শাইন টেক্সটাইলসের আইপিও অনুমোদন করা হয়। আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত ১৫০ কোটি টাকার ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ বাবদ আর ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহে খরচ করবে কোম্পানিটি।

ব্যাংক ঋণের মধ্যে ঢাকা ব্যাংকের সাভার শাখার অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের ২৮ কোটি টাকা ও উরি ব্যাংকের ঢাকা শাখার ২২ কোটি টাকা আইপিও তহবিল থেকে পরিশোধ করা হবে। অর্থ হাতে পাওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে আইপিও তহবিল ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির। ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত কোম্পানিটির স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৩৭৯ কোটি টাকা।

কোম্পানির প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, কোম্পানিটি ১৯৯৮ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। সাভারের গণকবাড়িতে ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) কোম্পানিটির কারখানা অবস্থিত। ইপিজেডে ৯০ বিঘা বা ৩০ একর জমির উপর কোম্পানিটির কারখানা। দেশের শতভাগ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয় বিভিন্ন ধরনের ফ্যাব্রিকস ও ডাইড ইয়ার্ন সরবরাহ করে তারা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানিটির ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১ টাকা ৮৬ পয়সা।

পুনর্মূল্যায়ন ব্যতীত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ১৭ পয়সা। ৩০ জুন, ২০১৮ হিসাব বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, রিং শাইন টেক্সটাইলসের বিক্রি হয়েছে ৯৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭০৮ কোটি টাকার ইয়ার্ন ও ২৯১ কোটি টাকার পোলার ফ্লিস বিক্রি হয়েছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯৯ পয়সা।