দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। ব্যাংকের অলস টাকার গন্তব্য ছিল ব্যাংকবহির্ভূত এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)। গত প্রায় এক বছর ধরে তারল্য সংকটে ভুগছে ব্যাংকিং খাত। বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে নেই বিনিয়োগযোগ্য কোনো তহবিল। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। নগদ টাকা না থাকায় গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

এ অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানতের টাকা তুলে নিতে চাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া তারল্য সংকটের পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়ে আস্থাহীনতায় চাপের মধ্যে রয়েছে আর্থিক খাত। এর প্রভাব পড়ছে কোম্পানিগুলোর মুনাফায়। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে পড়েছে।

তালিকাভুক্ত ২৩ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টি ঈদের ছুটির আগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব তথ্য থেকে এ খাতের লাভ-ক্ষতির সর্বশেষ অবস্থা জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে ১৭টি প্রথম ছয় মাসে মুনাফা করেছে এবং লোকসান করেছে বিআইএফসি, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও মাইডাস ফাইন্যান্স।

মুনাফায় থাকা ১৭ কোম্পানির মধ্যে ৯টির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে এবং আটটির কমেছে। সবগুলো এ সময়ে নিট ৩৬৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গত বছর এসব কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মুনাফায় বড় উল্লম্ফন হয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্সের। কোম্পানিটি জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে এক কোটি ৬৪ লাখ টাকা মুনাফার তথ্য দিয়েছে। গত বছর একই সময়ে সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা লোকসান করেছিল।

এখন পর্যন্ত তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছয় মাসের আর্থিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আইসিবির হিসাব বছর জুনে শেষ হয়। বাকি দুটির মধ্যে অবসায়ন হতে চলা পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে না। ফারইস্ট ফাইন্যান্স নির্ধারিত সময় শেষেও আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

বরাবরের মতো টাকার অঙ্কে মুনাফায় শীর্ষে ছিল আইডিএলসি ফাইন্যান্স। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়ে এ কোম্পানি নিট ১০৫ কোটি টাকা মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে। তবে তা গত বছরের তুলনায় ছয় কোটি টাকা কম। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১১১ কোটি টাকা। মুনাফা কমায় কোম্পানিটির ইপিএস গত বছরের প্রথমার্ধের ২ টাকা ৯৫ পয়সার বিপরীতে নেমে এসেছে ২ টাকা ৭৯ পয়সায়। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন সময়কালে) ইপিএস ১৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ৩১ পয়সায় উন্নীত হয়েছে।

মুনাফায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল উত্তরা ফাইন্যান্স। গত বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটি পৌনে ৭৩ কোটি টাকা মুনাফা করে। চলতি বছর তা ৪ শতাংশ বেড়ে পৌনে ৭৬ কোটি টাকা হয়েছে। ইপিএস ৫ টাকা ৮১ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ০৫ পয়সা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস ৪ টাকা ০১ পয়সা থেকে কমে ৩ টাকা ৪৩ পয়সায় নেমেছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ) প্রথম ছয় মাসে সাড়ে ৫৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছর ছিল সাড়ে ৫৩ কোটি টাকা।

তবে বোনাস লভ্যাংশ প্রদানের কারণে শেয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানিটির ইপিএস গত বছরের ৪ টাকা ৩৯ পয়সা থেকে সামান্য কমে ৪ টাকা ৩৬ পয়সায় নেমেছে। টাকার অঙ্কে ৩২ কোটি টাকা মুনাফা নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে ছিল আইপিডিসি। কোম্পানিটি গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি মুনাফা করেছে। গত বছর একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল পৌনে ১৬ কোটি টাকা।

এতে কোম্পানিটির ইপিএস ৭২ পয়সা থেকে ১ টাকা ৩৬ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। পঞ্চম অবস্থানে থাকা লংকা-বাংলার নিট মুনাফা হয়েছে ২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। চলতি বছর ১০ কোটি টাকার ওপর নিট মুনাফা করেছে ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স (১৪.৬৩ কোটি টাকা), ইউনাইটেড ফাইন্যান্স (১৩.৪৭ কোটি টাকা) ও জিএসপি ফাইন্যান্স (১০.৭৩ কোটি টাকা)। এ ছাড়া ইসলামিক ফাইন্যান্স সোয়া ৯ কোটি টাকা এবং ফনিক্স ফাইন্যান্স পৌনে ৯ কোটি টাকা মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে।

এক থেকে চার কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিডি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। তবে টাকার অঙ্কে মুনাফা কম হলেও গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে ছিল বিডি ফাইন্যান্স। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এটির ইপিএস ছিল মাত্র ০২ পয়সা, যা এ বছর ২৩ পয়সায় উন্নীত হয়েছে।

এ ছাড়া দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস ০১ পয়সা থেকে ১৮ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। লোকসানে থাকা বিআইএফসি মোট ৩৮ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এ ছাড়া ফার্স্ট ফাইন্যান্স ২৫ কোটি টাকা ও মাইডাস ফাইন্যান্স লোকসান করেছে সোয়া ১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাইডাস গত বছর একই সময়ে এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল।