মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে কিছু কোম্পানি কোটি কোটি টাকা মুনাফার পরেও লভ্যাংশ দিচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া লভ্যাংশ না দেয়া বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে স্পষ্ট প্রতারণা এমন অভিমত ব্যক্ত করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ। সে সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসিকে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে এসব কোম্পানি আবার কী করে জাতীয় রপ্তানি ট্রপি পায় তা হাস্যকর বলে মনে করছেন তিনি। পাশাপাশি টানা বোনাস ডিভিডেন্ড দিচ্ছে এমন কোম্পানির শেয়ারের বিষয়েও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এ বিশ্লেষক। এছাড়া জাতীয় রফতানিতে শাইনপুকুর সিরামিকস স্বর্ণ ট্রফি পেলেও বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যে জোটে নো-ডিভিডেন্ড। এ অভিযোগটি করছেন বিএসইসি’র কাছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি একেএম মিজান উর রশীদ চৌধুরী।

অভিযোগে তিনি জানান, পুঁজিবাজারের ৮টি কোম্পানিসহ ৬৬টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানিতে পুরস্কৃত হয়েছে। সেখানে ২৯টি স্বর্ণপদক, ২১টি রৌপ্যপদক ও ১৬টি ব্রোঞ্জপদক প্রদান করা হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলো হলো: এনভয় টেক্সটাইল, স্কয়ার টেক্সটাইল, শাইন পুকুর সিরামিকস এবং মুন্নু সিরামিক। সিলভার পদকপ্রাপ্ত কোম্পানি হলো বিএসআরএম স্টিল, শাশা ডেনিমস এবং ব্রোঞ্জ পদক প্রাপ্ত হলো ম্যাকসন স্পিনিং এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে মিজান চৌধুরী বলেন, এসব কোম্পানি ভালো মুনাফা অর্জন করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে মুনাফা কম দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করছে। একইভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইপিএস কম দেখানো হয়। অপরদিকে শাইনপুকুর সিরামিকস ডিভিডেন্ডের সময় নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সাথে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি বলেন, কোম্পানি যদি মুনাফাই না করেন তা হলে কি ভাবে স্বর্ণ প্রদক পেলো। স্বর্ণ  পদক পাওয়া কী হাস্যকর নয়। জাতীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে এ ধরনের একটা প্রচারণা চালিয়ে মূলত তারা সাময়িকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও অপরদিকে অর্থনীতি সহ পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। পুঁজিবাজার সারা বিশ্বের কাছে আজ তামাশায় পরিণত হয়েছে বলে তিনি লিখিত বক্তব্যে অভিযোগে জানান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কিছু মেধাহীন কর্মকর্তার সমালোচনা করে মিজান চৌধুরী উল্লেখ করেন, ডিএসই কিছু কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করবে বা ডিলিস্টিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এগুলো হলো- শ্যামপুর সুগার মিলস, সিএনএ টেক্সটাইল, মেঘনা পোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিং, জিল বাংলা সুগার মিলস, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ, বেক্সিমকো সিনথেটিক, দুলামিয়া কটন

, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, শাইন পুকুর সিরামিক, সমতা লেদার কমপ্লেক্স, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, সোনারগাও টেক্সটাইলস ও জুট স্পিনার্স ডিলিস্টিং প্রক্রিয়ায় ইস্যুয়ার কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষিত হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমন প্রশ্ন তুলে বিনিয়োগকারীদের নেতা মিজান চৌধুরী প্রশ্ন রাখেন, কার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ডিএসই এর এ ডিলিস্টিং প্রক্রিয়া। এ ব্যাপারে তিনি বিএসইসিকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহবান জানান।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. শাহজাহান মিনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ শাইনপুকুর সিরামিক বছরের পর বছর ডিভিডেন্ড না দিয়ে কিভাবে স্বর্ণ পদক পেলো তা বোধগম্য নয়। এই কারসাজি আমাদের দেশে আছে। কোন একটি কোম্পানি ডিভিডেন্ড দিবে না অথচ তারা জাতীয় পুরস্কার পাবে। এটা একমাত্র আমাদের দেশেই সম্ভব।