এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতন ঠেকিয়ে বাজার চাঙ্গা করার নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।এবিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল গত কয়েক মাসের পুঁজি বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সোমবার অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কার্যালয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থার কারন জানতে চাইবেন স্টেকহোল্ডারদের কাছে। একইসঙ্গে সমাধানের উপায় খোজাঁর চেষ্টা করবেন। কিভাবে পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, কোন সমস্যা দূর করলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সেই বিষয়গুলো বৈঠকে উঠে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তাছাড়া পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে বড় ব্যাংকগুলোকে বড় ধরনের ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত কয়েক মাস ধরে এমন খবরে পুঁজিবাজারে ভাসছে। আস্থা সঙ্কটে থাকা শেয়ারবাজারে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে বিদ্যমান বিনিয়োগসীমা সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিবর্তন আসছে। গত কয়েক বছর ধরেই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টরা নগদ টাকার প্রবাহ বাড়াতে বিনিয়োগসীমা সংক্রান্ত আইনটি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা সংক্রান্ত জটিলতা অবসানে বিএসইসির এ প্রস্তাবে সায় ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরুতে এ বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী ছিল না। তবে শেষ মুহূর্তে হলেও পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে বিনিয়োগসীমা সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ টাকার প্রবাহ বাড়াতে পরিপত্র জারি করলে ঘুরে দাঁড়াবো পুঁজিবাজার এমন মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। তাই অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে ব্যাংক নগদ টাকার প্রবাহ বাড়াতে পরিপত্র জারি করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে অর্থমন্ত্রী বলবে। তাছাড়া পুঁজিবাজার যে কোন মূল্যে স্থিতিশীল রাখতে অর্থমন্ত্রী সকলকে দিক নির্দেশনা দিবেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। কারন টানা পুঁজিবাজার দরপতনে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে দরপতন যেন থামছেই না। আইন-কানুন সংস্কার ও প্রণোদনায় গতিশীলতা ফেরার বিপরীতে পতন যেন বিনিয়োগকারীর সঙ্গী হয়েছে। শেয়ার বিক্রির চাপ বেশি থাকায় সূচকের বড় পতনে চলছে পুঁজিবাজার। আর কেনার চেয়ে কম দাম হলেও শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। যাতে কমছে শেয়ারের দাম ও মূল্যসূচকে বড় পতন ঘটছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমেছে, যা ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বরের চিত্রে ফিরেছে বাজার।

চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর থেকেই চলছে প্রায় টানা দর পতন। পহেলা জুলাই থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৪৮৮ পয়েন্ট বা ৯ শতাংশ। লেনদেনেও চলছে বড় খরা। দৈনিক গড় লেনদেন ৪শ কোটি টাকার ঘর পেরোতে পারছে না।

অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারক নানা সময়ে বাজার সঠিক পথে আছে দাবি করলেও বাস্তবে তারাও বুঝতে পারছেন বাজারের প্রকৃত অবস্থা। টানা দরপতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ আর গণমাধ্যমের নানা সংবাদে বাজারের নাজুক অবস্থা প্রকটভাবে ধরা পড়ছে। এমন অবস্থায় পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আছে সরকার।

বিশেষ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সুপারিশ অনুসারে বাজেটে বেশ কিছু ‘প্রণোদনা’ ঘোষণা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের শর্তাবলী অনেকটা নমনীয় করার পরও বাজারে গতি না ফেরায় তা সরকারকে কিছুটা ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। এর মধ্যে গত বুধবার বাজারে বড় দরপতন হলে সরকার কিছুটা নড়েচড়ে বসে। এমন অবস্থায় পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থার কারণ অনুসন্ধান ও করণীয় ঠিক করতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জানা গেছে, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কার্যালয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিএসই ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতৃবৃন্দ; আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শীর্ষ ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসহ (আইডিআরএ) কয়েকটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকতে পারেন। অর্থমন্ত্রণালয় এবং বিএসইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি দেশ প্রতিক্ষণকে নিশ্চিত করেছেন।

আহম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দ্বিতীয় বারের মতো বিএসইসিতে আসছেন। এর আগে গত ২২ এপ্রিল তিনি বিএসইসিতে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। ওই বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন ও তিন কমিশনার অংশ নেন। এতে পুঁজিবাজারের কোনো স্টেকহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন না। বিএসইসির কোনো কর্মকর্তাকেও বৈঠকে রাখা হয়নি।