দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারের আওতায় না আসলে ২৮ বিমা কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হবে। দেশে জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা মিলিয়ে মোট ৭৫টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এরমধ্যে ৪৭টি বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বাকি ২৮টি কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাই আসেনি।’

তিনি বলেন, যদি তারা তিন মাসের মধ্যে না আসে তাহলে তাদের প্রাথমিকভাবে লাইসেন্স স্থগিত করা হবে। প্রয়োজনে কিছুদিন সময় বাড়তে পারে। এরপরেও যদি না আসে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারের আওতায় না আসা কোম্পানিগুলোকে প্রথমে সাসপেন্ড করা হবে, এর পরে সাময়িক সনদ বাতিল, তারপর মার্জার অ্যান্ড এমারগেশন করা হবে। শেষ ধাপে স্থায়ীভাবে সনদ বাতিল করা হবে। বীমা খাত একটি শক্তিশালী খাত। এখাতে আমরা অনেক গতিশীলতা নিয়ে এসেছি। অর্থনীতির সাথে বিমাখাত জড়িত। বীমা খাত ও পুঁজিবাজার একটি মৌলিক এলাকা।

তিনি বলেন, আজকে আমাদের বিমা খাত অনেকটা এগিয়েছে। তবে আমাদের অর্থনীতি যতটা এগিয়েছে বিমাখাত ততটা এগোয়নি। বীমা খাতে গ্রাহকের যাতে আস্থার সঙ্কট না থাকে সেজন্য প্রতিটি বীমা কোম্পানির ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। জিডিপিতে আমরা সবার থেকে এগিয়ে আছি। আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত আমরাই লিড দেব বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে গেছে এবং যাবে তাদের কারও যেন শেয়ারের দাম পার ভ্যালুর নিচে না নামে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একদেশে দুই রকম হতে পারে না। কেউ পুঁজিবাজারে থাকবে, আবার কেউ বাইরে থাকবে এটা হতে পারে না। আগামী অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যেই বাইরে থাকা ২৮ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। অন্যথায় চার ধাপে এদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সরকার একটা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বীমা কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দিয়ে থাকে। সরকারের উদ্দেশ্য পূরণ না হলে লাইসেন্স বাতিল হবে। বীমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসলে বাজার আরও শক্তিশালী হবে।’

মতবিনিময় সভায় বীমা খাতের প্রধান প্রধান সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। সমস্যাগুলো হচ্ছে- বীমা পণ্যের স্বল্পতা, বীমা লিটারেসির ব্যবস্থা না থাকা, বীমা দাবি যথাসময়ে নিষ্পত্তি না করা, দেশে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ব্যতীত পুনঃবীমা প্রতিষ্ঠান না থাকা, বীমা কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের অভাব, জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর একচ্যুয়ারির অভাব এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে অপর্যাপ্ততা।

আমরা যেসব বাসা বাড়িতে থাকি, যেখানে অফিস করি অর্থাৎ সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান বীমা খাতের আওতায় আনতে হবে। এতে সকলের জীবনের সিকিউরিটি বাড়বে, যোগ করেন অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বীমা খাতের কিছু সমস্যা তুলে ধরেন বিভিন্ন বীমা খাতের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, বাংলাদেশের বীমা শিল্প দীর্ঘ সময় অবহেলিত থাকার ফলে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় অন্যান্য আর্থিক খাতের ন্যায় অগ্রসর হতে পারেনি।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, আইডিআরএ-এর চেয়্যারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী এবং বাংলাদেশ বীমা সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেনসহ বিভিন্ন বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডি ও খাত সংশ্লিষ্টরা।