দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মিনহাজ মান্নান ইমন। ডিএসই’র বর্তমান পরিচালক ও বিএলআই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পুঁজিবাজারের চলমান বিষয় নিয়ে সম্প্রতি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সাথে আলাপকালে নানা সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। পুঁজিবাজার ইস্যুতে বাজারের ওপর আস্থা প্রতিনিয়ত হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এ ভাবে পুঁজিবাজার চলতে পারে না।

বর্তমানে তিন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খারাপ কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন, ব্যাংকিং খাতের নাজুক অবস্থা এবং নন-ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থার প্রভাব পুঁজিবাজারে বলে তিনি দাবী করেন।

ডিএসই’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, পুঁজিবাজারের যেসব বিনিয়োগকারী আছেন, তারা বাজারের ওপর আস্থা প্রতিনিয়ত হারাচ্ছেন। আলোচনা অনেক হয়, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা হাতে কিছু পায় না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে খারাপ কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন, ব্যাংকিং খাতের নাজুক অবস্থা এবং নন-ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থার প্রভাব পুরোটাই পড়েছে পুঁজিবাজারে।

ইমন বলেন, আমরা কথায় কথায় বাজারের আস্থার কথা বলি। অর্থনীতির সংকট যেটা, তারল্য সংকট যেটা, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কিত সংকটের বিষয়টি অনেক উপরের বিষয়। এটা অনেক বিশাল আস্থার জায়গা। এ জায়গাটি ঠিক করার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু প্রতিক্রিয়া আছে। সেখানে আমরা কিছু কাজ করতে চাই। আমরা কথায় কথায় বলি বাজারে ভাল মানের আইপিও আসছে না। আসলে ভাল মানের আইপিও বলতে কিছু নেই। আইপিওতে যেসব কোম্পানি আসে তাদের আর্থিক প্রতিবেদনের মান নিয়ে আমরা বলতে পারি।

তিনি বলেন, প্রসপেক্টাসে যে আর্থিক প্রতিবেদন থাকে যেটা কোম্পানি তৈরি করে। ইস্যু ম্যানেজার তা নিয়ে আসেন এবং অডিটর সেটায় স্বাক্ষর করে বাজারে নিয়ে আসেন। বাজারে আসার আগে সেই আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির যে তথ্য থাকে, আইপিও আসার ২-৩ বছর পর সেই পিকচারটা আর থাকে না। বিনিয়োগকারী এই জায়গায় তার আস্থাটা প্রতিনিয়ত হারাচ্ছেন।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, গত ফেব্রুয়ারী থেকেই পুঁজিবাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমরা দেখছি। এর কারণ হচ্ছে, যারা বাজারের মন্দা চলাকালীন কম দরে শেয়ার কিনেছিলেন, জানুয়ারির ঊর্ধ্বগতির সময়ে তাদের বড় অংশই তা বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছেন। এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিও বড় অংকের শেয়ার অফলোড করেছে। এর পর থেকে আর পুঁজিবাজার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
তিনি বলেন, বাজার নিয়ে আশা-ভরসা তৈরি হলে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ে, লেনদেনও বাড়ে।

কিন্তু যখন এখান থেকে মুনাফা করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে, পরিস্থিতির অবনতি হয়, তখন বিনিয়োগকারীরাও বেরিয়ে যায় কিংবা সাইড লাইনে থাকে। পরিস্থিতির কারণে সূচক কমে যেতে পারে, কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে যদি লেনদেনও কমে যায়, সেটি কিন্তু শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এখন বিনিয়োগকারীদের আস্থায় স্পষ্ট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

বাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, এখানে প্রডাক্টের অভাব। বিনিয়োগকারীর পুঁজিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের এখানে বিকল্প প্রায় নেই বললেই চলে। ফিউচার, ডেরিভেটিভস, গোল্ড কিংবা বন্ড মার্কেট তৈরি করতে পারলে বিনিয়োগকারীরাও‘তহবিল বহুমুখীকরণ করতে পারতেন। এ বিষয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বহুজাতিক ও স্থানীয় বড় কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।