দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহজুড়ে উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তেমনি সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকের নাম মাত্র উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। মূলত চলতি বছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজার কিছুটা ধীর গতিতে। তবে শুরুতে পতনের মাত্রা কিছুটা কম থাকলেও সা¤প্রতিক এর মাত্রা অনেকটা বেড়েছে। সরকারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানামুখী পদক্ষোপের পর ও স্থিতিশীল হচ্ছে না পুঁজিবাজার। ফলে সবার মনে একটাই প্রশ্ন কে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। এর জন্য কারা দায়ী। গত নয় বছরে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন কমছে। এখানে কোন বিনিয়োগকারী এসে লাভ করতে পারেনি। বরং পুঁজি নি:স্ব হওয়ার গল্পের শেষ নেই।

বিদায়ী সপ্তাহে ৫ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে ২ কার্যদিবস পতন আর ৩ কার্যদিবস উত্থান হয়েছে। সপ্তাহ শেষে দেখা যায় উত্থানের চেয়ে পতনের পাল্লাই ভারি। অর্থাৎ বিদায়ী সপ্তাহে উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে উভয় শেয়ারবাজারে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১ হাজার ৯৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ৫০৮ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে ৯৮ লাখ ৩৮ হাজার ২০৭ টাকা বা ০.০৫ শতাংশ বেশি। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৫৭ কোটি ৮৯ লাখ ৫১ হাজার ৩০৫ টাকার।

ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৯০১ টাকার। আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছিল ৩৯১ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ২৬১ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে গড় লেনদেন ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬৪০ টাকা বেড়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩১ পয়েন্ট বা ০.৬২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট বা ১.০৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট বা ০.৭৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৩৮ পয়েন্ট এবং ১৭৫৫ পয়েন্টে। ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে ৩৫৫টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৩৭টির বা ৩৯ শতাংশের, কমেছে ১৯৩টির বা ৫৪ শতাংশের এবং ২৫টির বা ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য অর্থমন্ত্রী বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভাও করেছেন। কিন্তু বাজারে কোন পদক্ষেপেরই আশানুরূপ কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। আসলে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে তারল্য সংকট রয়েছে। এর পাশাপাশি বাজারে আস্থার সংকটও রয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে এর প্রভাব পড়বেই। এছাড়া বাজারের আরও কিছু কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়গুলো যতদিন পর্যন্ত সমাধান না হবে, ততদিন বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরে আসবে না বলেও মনে করছেন তারা।

তবে কেউ কেউ বলছেন, কোন দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেজন্য দরকার কার্যকর ও গতিশীল পুঁজিবাজার। কিন্তু বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মতবাদের ভিত্তিতে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়া-কমা এবং সূচকের উত্থান-পতন ঘটলেও এর উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হয় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। বাজারের উত্থান-পতন এখানে ব্যাকরণ মেনে হয় না।

ফলে শিল্পোৎপাদন ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এর যে ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল, তা ঘটছে না বলেই প্রতীয়মান। আর বাজার কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কারসাজি বড় ভূমিকা রাখে বলেই ধারণা করা হয়। আশার কথা, এ ধরনের কারসাজি রোধে বিএসইসি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আর বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় আনতে এ কাজটি আরও জোড়ালো ভূমিকা রাখুক এমনটিই সবাই প্রত্যাশা করছেন বলেও ধারনা ওই বিশ্লেষকদের।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে যারা বিভিন্ন সময় শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে তারা কখনও কোনো কোম্পানির দর অযৌক্তিক হারে বাড়ায় আবার কমায়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা না বুঝে ওই শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ এগুলো দেখার কেউ নেই বাজারে। যাদের এগুলো দেখার দায়িত্ব তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না।

যদিও বিএসইসি এ ব্যাপারে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে কিন্তু তা অনেক দেরিতে। কারণ বিএসইসি যখন ব্যবস্থা নিয়েছে ততদিনে কারসাজিকারকরা ফায়দা লুটে নিয়েছে। এতে উল্টো সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতির মুখে পড়েছে। কারণ সবেমাত্র তারা ওই সব শেয়ারে ঢুকেছে। এখানে বিএসইসি যা করেছে তা অবশ্যই বাজারের জন্য ভালো কিন্তু যেহেতু বিএসইসি জানে কোথায় কি হচ্ছে তাই কোনো শেয়ার নিয়ে কারসাজি শুরুর দুই-চার দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলেও মনে করছেন তারা।