দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মানুষের জীবন ও সম্পদ সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সম্ভাব্য বিপদ মোকাবেলা করার হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলে বিমা। নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম প্রদানের বিনিময়ে অপরপক্ষের নিশ্চয়তা ও ঝুঁকি গ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকারের মাধ্যমে বিমা করে থাকে মানুষ। দেশে এমন বিমা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়। তবে বিশ্বাসযোগ্য এবং আস্থাশীল বিমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে হাতেগোণা কয়েকটি। বাংলাদেশে ৬২টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ২টি সরকারি (জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা), ৬০টি বেসরকারি।

বেসরকারি বিমার মধ্যে আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বিদেশি। নিশ্চয়তা ও ঝুঁকি গ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণের প্রথম সারির বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএম ইউসুফ আলী। তিনি বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়াম বাবাদ প্রায় ৬’শ কোটি টাকা আয় করে ২০১৮ সালে জীবন বিমা খাতে ব্যবসায়িক ভাবে শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে। ফলে কোম্পানিটি শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখলো। ২০১৮ সালে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৫৫৯ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এতে নতুন ব্যবসা সংগ্রহের দিক থেকে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে কোম্পানিটি। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় ছিল ২৭৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। গত বছর এ কোম্পানির গ্রস প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৮০৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ৫০১ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কোম্পানীর আর্থিক প্রতিবেদনে জানা যায়, কোম্পানীটির আয়ের বাইরে অন্যান্য খাতসমূহ ছিলো প্রতিযোগীতামূলক, যদিও তা সংখ্যাগতভাবে নিম্নমূখী। বিগত বছরের তুলনায় ফিক্সড ডিপোজিট এবং লভ্যাংশে হ্রাস পেয়েছে। যেখানে শেয়ার বিক্রয়লব্ধ লভ্যাংশ ৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানীর দাবি নিষ্পত্তির দিক থেকে আরেকটি মাইল পলক অর্জন করছে।

বাংলাদেশের জীবনবিমার ইতিহাসে ২০১৮ সালের মৃত্যুদাবি বিমাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ বিমা দাবি পরিশোধ করছে। যার পরিমাণ ছিলো ৯২২,০৮,৮১,৫২৬ টাকা। ফলে কোম্পানীর ফান্ড সামান্য হ্রাস পায়। ২০১৭ সালে লাইফ ফান্ড হিসেবে ২২৮৬.৫৪ কোটি টাকার বিপরীতে ২০১৮ সালে লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ১৭৮৮.৬৬ কোটি টাকা উন্নীত হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, কৌশলী ও বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবসায় নতুনত্ব আনয়ন, পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতা ও সুশিক্ষিত, দক্ষ জনবলের অক্লান্ত প্ররিশ্রমের কারণে শীর্ষে অবস্থান করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। শীর্ষ অবস্থানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চলতি বছরে প্রিমিয়াম আয় ১ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রত্যাশায় কাজ করছে কোম্পানিটি।

তবে বর্তমানে বিমা খাতে মোট ৭৮টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ বিমায় ৪৬টি ও জীবন বিমায় ব্যবসা করছে ৩২টি কোম্পানি। বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনায় বিমা কোম্পানির সংখ্যা অনেক বেশি। তবে এত বেশিসংখ্যক বিমা কোম্পানি থাকলেও সবাই কিন্তু ব্যবসা করতে পারছে না। বর্তমানে সাধারণ ও জীবন বিমা খাতে যত ব্যবসা হয়, তার অর্ধেকেরও বেশি সম্পন্ন হচ্ছে আটটি কোম্পানির মাধ্যমে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) দেওয়া হিসাব পর্যালোচনা করে এমন তথ্য মিলেছে।

আইডিআরএর দেওয়া বিমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম ও আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাধারণ বিমা খাতের ব্যবসার ৬০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে পাঁচ কোম্পানির হাতে। এ কোম্পানিগুলো হচ্ছে সাধারণ বিমা করপোরেশন, গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ও প্রগতি ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

আর তহবিল সংগ্রহে জীবন বিমা খাতের শীর্ষ তিন কোম্পানি মেটলাইফ, ফারইস্ট লাইফ ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের হাতে রয়েছে মার্কেট শেয়ারের ৫৬ শতাংশ। সাধারণ বিমা খাতের ব্যবসায় শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা করপোরেশন। সাধারণ বিমা ব্যবসার মার্কেট শেয়ারের ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির হাতে। ২০১৮ সালের তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানিগুলো মোট ৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে সাধারণ বিমা করপোরেশন একাই ১ হাজার ১৩ কোটি টাকার প্রিমিয়াম পেয়েছে।

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এ কোম্পানির হাতে রয়েছে মার্কেট শেয়ারের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। একই সময়ে এ ৩১১ কোটি টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স ২১৪ কোটি টাকার গ্রস প্রিমিয়াম পেয়েছে, যা মার্কেট শেয়ারের ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ।

সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২১০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় করে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। সাধারণ বিমা খাতের মার্কেট শেয়ারের ৬ দশমিক ২ শতাংশ রয়েছে এ কোম্পানির হাতে। পঞ্চম অবস্থানে থাকা প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের মার্কেট শেয়ার ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২০১৮ সালের তিন প্রান্তিকে এ কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় হচ্ছে ১৫১ কোটি টাকা।

আইডিআরএর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জীবন বিমা খাতের মার্কেট শেয়ারের এক-তৃতীয়াংশের বেশির অধিকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি মেটলাইফ। ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত জীবন বিমা খাত মোট ৫ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার তহবিল পেয়েছে। এর মধ্যে মেটলাইফের তহবিল সংগ্রহের পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা, যা মোট তহবিলের ৩৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

প্রিমিয়াম সংগ্রহে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এ কোম্পানিটি ২০১৮ সালের তিন প্রান্তিকে ৬৪৪ কোটি টাকা প্রিমিয়াম পেয়েছে। একই সময়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৬২৪ কোটি টাকা, যা এ খাতের মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহের ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ।

সূত্র মতে, দেশে বিমার সংখ্যা অনেক, তবে বিশ্বস্ত এবং আস্থার জায়গা অনেকেই সৃষ্টি করতে পারেনি। সেদিক থেকে অনেকটা সফল ‘পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স’। মানুষের আস্থা অর্জন করেছে এ প্রতিষ্ঠান। তেমনি বিমা গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। মানুষের আস্থা অর্জন করায় এতো গ্রাহক।
স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও লক্ষ্য ভিত্তিক গৃহীত সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে বিগত বছরগুলোর ন্যায় ২০১৮ সালেও কোম্পানি সাফল্যের আরও একটি বছর অতিক্রম করেছে।

আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অবস্থা এবং জীবন বিমা শিল্পে নানাবিধ সমস্যা ও নতুন বিমা কোম্পানির অনুমোদনের কারণে সৃষ্ট প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও কোম্পানি আলোচ্য বছর ৮০৩.৯৭ কোটি টাকা প্রিমিয়াম অর্জন করেছে এবং যথাসময়ে বিমা দাবি পরিশোধ করেছে।

বাংলাদেশের সর্বস্তরের বিমা গ্রহীতাদেরকে গুণগত মান সম্পন্ন বিমা সেবা দানের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে অনুসরণে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স অঙ্গীকারাবদ্ধ ও নিরলসভাবে সচেষ্ট। সেই লক্ষ্যে আয়ের সাথে সংগতি রেখে বিমা সেবাকে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই সাথে লাইফ ফান্ড এর সর্বাধিক সম্ভব লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে পলিসি হোল্ডারদের সর্বোচ্চ বোনাস এবং শেয়ার হোল্ডারদের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ প্রদানই এই কোম্পানীর কর্মকান্ডের মূল উদ্দেশ্য।

কোম্পানিটি বেশিসংখ্যক মানুষের দাবি পরিশোধ করার কারণে ‘পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স’র প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলে মানুষ এখনও বিমাকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু ‘পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স’কে বিশ্বাস করে। কারণ দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলেই ‘পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স’র সুফলভোগী গ্রাহক আছেন। পাশের মানুষ বিমা করে সুফল পাওয়ায় আস্থা তৈরি হয়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স ধারাবাহিক ভালো ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। কোম্পানিটি ধারাবাহিক ৪০ শতাংশ হারে ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। বিমা খাতের অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় এ কোম্পানির ভালো ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। এ কোম্পানিটির পরিচালকদের হারে ২৮.৯২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৮.৭৪ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে ০.২১ শতাংশ, সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬২.১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৬০ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার।