দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : ২০১৯ সালের ধ্বস স্মরনকালের ধ্বস বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।এ ধসের তদন্ত চান বিশ্লেষকরা। কারন বিনিয়োগকারীরা এ ধ্বসে পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতির আকার ও দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে দেশের পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা। কিন্তু বাড়েনি পুঁজিবাজারের আকার ও বিনিয়োগকারী। উল্টো ২০১০ সালের পর থেকে থেমে চলা দরপতন নতুন করে ২০১৯ সালে আরেক দফা ধসে পরিণত হয়েছে।

এই ধসে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১১২২ পয়েন্ট। কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে ৬০ হাজার কোটি টাকার পুঁজি হারিয়ে বাজার ছেড়েছেন আড়াই লাখ বিনিয়োগকারী। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন। ব্রোকারেজ হাউসগুলো ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছে। লোকসান কমাতে শতশত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়েছে। বন্ধ হয়েছে শাখা অফিসও। অর্থাৎ ১০ বছরে যেখানে বাজার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে পেছনে হাঁটছে পুঁজিবাজার।

তাই দেশের পুঁজিবাজার রক্ষায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে চলা ধসের সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত করে খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীদের নেতা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নতুন করে ধসের কারণ, ভুয়া এবং খারাপ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া। উৎপাদন বন্ধ থাকার পাশাপাশি ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন দিয়ে একদিকে গত আট বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, কারসাজির মাধ্যমে এক-দুবছরে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে লক ফ্রি হওয়ার পর উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছেড়েছে। এই পুরো কার্যক্রমের সহযোগিতা করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তাই বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের পক্ষ থেকে আমি বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারের পাশাপাশি ডিএসই ও সিএসইর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবি করছি। একই সঙ্গে গত ৯ মাস ধরে টানা দরপতন নতুন করে হওয়া ধসের সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

ডিএসইর সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নুরে নাহরিন বলেন, আস্থাহীনতায় ভয়াবহ সংকটে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। দেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করে সাইড লাইনে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের ধসে বিনিয়োগকারী, স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ হাউস এবং সরকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মান। আর বিনিয়োগকারীরা ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো হারিয়েছে পুঁজি ও ব্যবসা। অন্যান্য দেশের মতো নতুন ধসের সঙ্গে জড়িতদের চিহিৃত করতে তদন্ত করা উচিত। তাদের শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৯ সালের ধসে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে বেশি। এই ক্ষতি পোষাতে শুধু তদন্ত করলেই হবে না। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, পুঁজিবাজার মৌলিক নীতি ও তার মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছে। এখানে দুর্নীতি ও অনিয়মে ভরপুর। গত আট বছরে ১০০টিরও বেশি নতুন কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে বাজারে এসেছে। এগুলো সঠিক বিচার হলেই পুঁজিবাজার ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু বিচার চাইবেন কার কাছে? নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকেরাই তো এর সঙ্গে জড়িত।