আবু সাঈদ, জবি প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : বিশ্ববিদ্যালয় আইনে না থাকায় এতদিন বাধায় আটকে ছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। কিন্তু এখন সে পথ খুলতে উদ্যোগী হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর তাই এর মধ্য দিয়ে প্রায় ৩২ বছর পরে এই প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের একটা সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জবি উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান।

২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের কোনো বিধান না থাকার ফলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারেনি জবি প্রশাসন। সেই আইনে ছাত্র সংসদের বিধান যোগ করতে এর একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে সেটি সবার মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আগে সর্বশেষ জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের (জকসু) নির্বাচন হয় ১৯৮৭ সালে। এর আগে মোট ১৩টি নির্বাচন হয়েছে এই প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ১৯৫৪ সালে জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের (জকসু) প্রথম নির্বাচন হয়। স্বাধীনতার (১৯৬৯) আগ পর্যন্ত নির্বাচন হয় ১০টি কমিটি। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৭ সালে জকসুর চারটি নির্বাচন হয়।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ কার্যকর নেই। নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একই অবস্থা। ফলে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে মেধাবী. কর্মঠ ও যোগ্য ছাত্রনেতা পাওয়া থেকে। দেশের রাজনীতিতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী জানেই না যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্র সংসদ’ কি। যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য ছাত্র সংসদ মুখ্য ভূমিকা পালন করে, সেই গণতন্ত্র আসার পর থেকে ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরার একমাত্র উপায় হলো নির্বাচিত ছাত্র সংসদ। দীর্ঘদিন ধরে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না। বহু দেনদরবার পর চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে।

কেন জকসুনির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নে এখন প্রতিষ্ঠানটির আইনের কথা সামনে আসছে। তবে ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের বিধান যুক্ত করা হয়নি। তাই এখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হলে আগে আইনটি সংশোধন এবং ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র তৈরি করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ডাকসু) ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঘোষণার পরপরই প্রশাসনের কাছে ছাত্র সংসদের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তখন বলেছিল, যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের বিধান যুক্ত করা হয়নি, তাই তারা একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে ছাত্র সংসদের আইন পাস করে তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে পাঠাবে।

সেই ধারাবাহিকতায় জকসু গঠনতন্ত্র মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ৯০ দিনের মধ্যে জকসু গঠনতন্ত্রের ওপর মতামত দেওয়া যাবে। খসড়া গঠনতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো, জকসুর খসড়া গঠনতন্ত্রমতে, অনার্স প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টার থেকে এমফিল পর্যন্ত নিয়মিত শিক্ষার্থীরা জকসুর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তাদের বয়স হতে হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন পর্যন্ত অনুর্ধ্ব ২৬ বছর। ২৬ বছরের বেশি বয়সীরা এমনকি ভোটও দিতে পারবেন না।

যারা ইভিনিং কোর্সের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েছেন তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট বা কলেজের শিক্ষার্থীরা জকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। জকসুর উদ্দেশ্য সম্পর্কে গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের আদর্শ ও মূল্যবোধ শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরা। একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা।

১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নির্বাচন হবে এবং এ কমিটি প্রতি তিন মাস অন্তর মিটিং করবে। মিটিংয়ের জন্য কমপক্ষে তিন দিন আগে আহ্বান করতে হবে। আর প্রতি মিটিংয়ে কমপক্ষে কমিটির এক-তৃতীয়াংশ উপস্থিত থাকতে হবে।

কার্যকরী কমিটির কাজ হবে- শিক্ষার্থীদের কমন রুম পরিচালনা করা, খেলাধুলার আয়োজন করা, ম্যাগজিন প্রকাশ করা, শিক্ষার্থীদের জন্য বিতর্কের ব্যবস্থা করা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সু-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কনফারেন্সে শিক্ষার্থীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা এবং তাদের আমন্ত্রণ জানানো।

ভিসির বক্তব্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় নির্বাচন হবে আর ছাত্র সংসদের ভোট হবে না, এটা হয় না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’

ডাকসুর আদলে গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে এবং তা মতামতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে কেউ ৯০ দিনের মধ্যে এই গঠনতন্ত্র পড়ে মতামত দিতে পারবে। প্রাপ্ত মতামত গ্রহণযোগ্য হলে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিবেচনা করবে। জকসুর গঠনতন্ত্র পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাস করে তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে পাঠানো হবে।’

জকসু নির্বাচনের জন্য গঠনতন্ত্র তৈরি একটা ইতিবাচক দিক হিসাবে দেখছে ছাত্রসংগঠনগুলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িক সব ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণ ও শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি যেন ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে আসতে না পারে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানায় তারা।