দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে এবং লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে ওহি পাঠানো বন্ধ করে দুই বছরের জন্য মাস্টার্স বা এমফিল কোর্সে ভর্তি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার কোন পথে শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স কাউন্সিল (এনএলসি)।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তারেক আমার খুব প্রিয় মানুষ। ছোটবেলা থেকেই তাকে দেখেছি। সেই জন্য তাকে বলি, এতদূর থেকে বসে তোমার মায়ের মুক্তি ঘটাতে হবে না। তুমি প্লিজ ওখানে বসে দু’বছর মার্স্টার্স বা এমফিল করো। এখানে (বাংলাদেশে) যারা আছে তাদের কাউকে দায়িত্ব দিয়ে দাও। আর এখানে স্থায়ী কমিটির যাদের হাত, পা ধরে আসে; দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, তাদের বাড়িতে পাঠাও। তারা এসে দু’ঘণ্টা দাঁড়াতে পারেন না, এরা বাড়িতে বসেই রাজনীতি করুক।

তিনি বলেন, আমি আশা করি অদূর ভবিষ্যতে তারেক জিয়া (তারেক রহমান) প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু এখন নাক গলানো বন্ধ করতে হবে। ওহি দেওয়া, স্কাইপ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তারেকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করো, তাহলে এরা (অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা) তোমাকে (তারেক রহমান) জয়যুক্ত করবে এবং তোমার মাকে কারামুক্ত করবে। এটাও সত্য কথা, খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি প্রায় অসম্ভব। তবে তাকে মুক্ত করার দায়িত্ব তো আমাদেরই। শুধু হলে বসে বক্তৃতা দিয়ে নয়, মাঠে যেতে হবে।’

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি প্রসঙ্গে গণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, বাংলাদেশ চলছে ওহি দ্বারা। বিচার বিভাগের বিচারপতিরা আমাদের বিবেক, জাতির একমাত্র আশা আকাঙ্ক্ষার জায়গা। সেখানে তারা একটি জামিনের মামলা শুনতে সাহস পান না। এই নিম্ন আদালতে খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তকেও সুপ্রিম কোর্ট জামিন দেওয়ার নজির আছে। এমন বহু উদাহরণ আছে। অথচ বিচারপতিদের জামিন শুনানি শুনতে হাঁটু কাঁপে, বিবেক তো ঘুমিয়ে আছে, হাঁটু কাঁপছে। তারা বললেন, পুরো বেঞ্চ শুনবেন। তারা আবার মেডিক্যাল রিপোর্ট চাইলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ কিনা। তিনি অসুস্থ না থাকলে হাসপাতালে থাকবেন কেন? আর অসুস্থ না হলে তাকে হাসপাতালে আটকে রেখেছে কেন? বিচারপতিরা হুকুমনামার আশায় থাকলেন, ওহি কখন আসবে! তারপর সাতজন বিচারপতি মিলে জামিনের মামলা শুনলেন। ছয়জন বিশেষজ্ঞের নামের সেই রিপোর্ট এলো কিন্তু যে মূল বিশেষজ্ঞের নাম থাকার দরকার, তা ছিল না।

বিচার বিভাগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘কথায় কথায় আমাদের বিচারপতিরা বঙ্গবন্ধু বলে ফ্যানা তুলে ফেলেন, যে কোনও সুযোগ পেলেই টুঙ্গিপাড়া যান, মায়া কান্না কাঁদেন। অথচ তার সেই অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে দেখেন না। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় অপরাধ বিচার বিভাগকে একাকীতত্বে রাখা।’ খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর হতে চললো। যারা তাকে কারাগারে রেখেছেন তারা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী।’’

‘বিচারকরা যদি চোখে দেখতে পেতেন, বিবেক জেগে থাকতো, ওহির আশায় না থাকতেন তাহলে তারা জেল কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রুল জারি করে বলতেন কেন তাকে (খালেদা জিয়া) একাকী রেখেছো? ’তার যে মেডিক্যাল রিপোর্ট তা এত জ্ঞানী সাতজন বিচারপতি একটু লক্ষ্য করে দেখলেন না সেখানে কোনও মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেই। জেলখানায় তার অন্যান্য রোগের পাশাপাশি মূল রোগ হলো অবসাদ, একাকীত্ব। অথচ ওই মেডিক্যাল রিপোর্টে কোন মানসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেই। অথচ এমন একটি অসম্পূর্ণ রিপোর্ট দেখে তারা রায় দিলেন।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাও ওহি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন। এটাই এই জাতির চরম দুর্ভাগ্য। আপনাদের ওহি আসছে লন্ডন শহর থেকে, স্কাইপের মাধ্যমে। আপনারা এটা ছাড়েন। আপনাদের মাঝে চৌকস কিছু নেতা আছে, তাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে দেন। দেখবেন দেশবাসী আপনাদের পাশে আছে। আপনাদের প্রায় ১ লাখ কর্মী বর্তমানে জামিনে আছেন। পাটকল শ্রমিকরা যেমন এই শীতের মাঝেও কম্বল গায়ে বসে আছেন আপনারাও অন্তত দুটো দিন হাইকোর্টের মাঠে বসে থাকুন না, দেখুন আমাদের বিচারপতিদের বুকে সাহস আছে কিনা, তারা (বিচারপতিরা) ন্যায়ের জন্য দাঁড়ায় কিনা, তাদের (বিচারপতি) মনে এক মূহূর্তের জন্য জাগে কিনা এই জনতার মঞ্চে তাদের (বিচারপতিদের) বিচার হবে। তাই আপনারা এই ওহির ভরসা ছাড়েন।

এসময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক সাংসদ এহসানুল হক মিলন ও গোলাম মওলা রনি, সমিতির সাবেক সহসভাপতি গোলাম রহমান ভূঁইয়া প্রমুখ।