দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা আনার কাজ শুরু করেছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল। এ লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ১৪ কোম্পানির কাছে তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন চেয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হিসাব মান বজায় রেখে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এফআরসি।

এফআরসি যেসব কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো হচ্ছে কেয়া কসমেটিকস, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, এসকোয়ার নিট কম্পোজিট, সিটি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, লিবরা ইনফিউশনস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড।

এসব কোম্পানির মধ্যে, বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে হিসাবমান অনুযায়ী সঞ্চিতি সংরক্ষণ হয়েছে কি না, তা যাচাই করছে এফআরসি। এ ছাড়া তালিকভুক্ত কোম্পানিগুলো ভুয়া তথ্য দিয়ে মুনাফা বাড়িয়ে-কমিয়ে দেখাচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবে তারা।

নিরীক্ষক নিয়োগ, পদত্যাগ কিংবা পুনর্নিয়োগের বিষয়টিও আইন মেনে করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করবে এফআরসি। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই  তালিকাভুক্ত এক কোম্পানির নিরীক্ষকের পদত্যাগ ও নিয়োগের বিষয়ে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে এফআরসি। অ্যাডভেন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের নিরীক্ষকের পদত্যাগ ও অপর নিরীক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।

এ ছাড়া কয়েকটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত সঞ্চিতি না রাখার অভিযোগ রয়েছে, যা এফআরসি খতিয়ে দেখছে। কেয়া কসমেটিকসের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনেও বড় ধরনের অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে সংস্থাটি। যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া যাবে, সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনতে বিভিন্ন ধরনের বিধি প্রণয়ন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে এফআরসির চেয়ারম্যান সিকিউকে মুস্তাক আহমেদ বলেন, আমাদের মূল কাজ হচ্ছে নিরীক্ষিত প্রতিবেদনগুলো হিসাবমান বজায় রেখে তৈরি হয়েছে কি না, তা যাচাই করা। এখানে সব বিষয় প্রকাশ করা হয়েছে কি না, নাকি ভুয়া তথ্য দিয়ে প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে, ট্যাক্সের সঙ্গে মিল রয়েছে কি না ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিবেদন দেখছি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোম্পানিকে পরামর্শও দিচ্ছি। কারণ

আমাদের বিধিগুলো এখনো পাস হয়নি। বিধিগুলো পাস হলে তখন অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে মামলা হবে। তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারসাজি করতে অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনে মুনাফা বাড়িয়ে-কমিয়ে দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।

ইনটেক লিমিটেড শেয়ার দরে কারসাজি করতে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে অস্বাভাবিক মুনাফা দেখায়। এ সময় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির ঘোষণাও দেয়। ফলে স্বল্প সময়ে কোম্পানির শেয়ার দর ১২ থেকে ৭০ টাকায় উন্নীত হয়। তবে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের শেষ প্রান্তিকে কোম্পানির মুনাফা উধাও হয়ে যায়।

নিট মুনাফা নেমে আসে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৮-১৯ হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশও দেয়নি কোম্পানিটির পর্ষদ। ফলে শেয়ার দর নেমে আসে সর্বনিম্ন অবস্থানে। বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের লোকসান করেন এ কোম্পানির শেয়ারে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের অর্ধবার্ষিকীতে ইনটেক লিমিটেডের নিট মুনাফা হয় ৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র আড়াই লাখ টাকা। কোম্পানিটি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের হলেও এর মূল আয় আসে মাছ বিক্রি থেকে। এ সময় কোম্পানিটির মাছ বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি দেখায় ১২১ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ইন্টারনেট ও ডাটা সার্ভিস, সফটওয়্যারের আয়ও আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি দেখিয়েছে।

তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ইনটেকের নিট মুনাফা ছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা, যা হিসাব বছর শেষে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকায় নেমে আসে। চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানিটি ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা লোকসান করলেও কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি কোম্পানিটি।

প্রান্তিক প্রতিবেদনে আয় বাড়িয়ে-কমিয়ে দেখানো প্রসঙ্গে মুস্তাক আহমেদ বলেন, প্রান্তিক ও নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে বড় ধরনের পার্থক্য থাকলে, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে বিশেষ নিরীক্ষা হবে। ২০১৫ সালে জাতীয় সংসদে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরএ), ২০১৫ পাস হয়। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আর্থিক দন্ডে পাশাপাশি কারাদন্ডে বিধানও রয়েছে।