আবু সাঈদ চৌধুরৗ, জবি: দীর্ঘবছর অব্যবস্থাপনায় থাকার পর নতুনভাবে সংষ্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ঐতিহাসিক সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতি বহনকারী পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্কের। কাজ শুরু হওয়ার নির্ধারিত ৩ মাসের মধ্যে সংষ্কার কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বছর পেরিয়ে নতুন বছরেও কাজ শেষ করার কোন অগ্রগতি নেই।

পুরান ঢাকার বাসীন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে পার্কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সে অনুযায়ী গত ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে সংষ্কার কাজ শুরু এটির। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরো দশ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হওয়ার কোনো অগ্রগতি নেই। এদিকে সংষ্কার কাজের কারণে শুরু থেকেই জনসাধারণের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এখানের নিয়মিত প্রাতঃ ভ্রমণকারীরা।

জানা যায়, বাহাদুরশাহ পার্ক সংস্কার করণের জন্য এর প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। ‘জিট ইন্টারন্যাশনাল’ এবং ‘প্রোমা ইন্টারন্যাশনাল’ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো পার্কটি সবুজ টিনের শেড দিয়ে ঘেরা। এর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে প্রধান ফটক দুটি বন্ধ করে পার্কের সংস্কার কাজ চলছে। পার্কটির ভেতর চারপাশে হাঁটার জন্য দুই লেনে রাস্তা বানানোর কাজ করছে শ্রমিকরা। এ ছাড়া ভেতরের সিপাহি বিদ্রোহের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের পাশের বেষ্টনির সংষ্কার কাজ করা হচ্ছে। এদিকে পার্কের ভেতর দর্শনার্থীদের বসার জায়গা এখনো তৈরি হয়নি। এছাড়া পার্কের চারটি ফটক, পার্কের ভেতর ঝরনার কাজও শুরু হয়নি। তা ছাড়া পার্ক ঘিরে নতুন করে দেয়াল নির্মাণকাজ আগের মতোই পড়ে আছে। আর ক্যাফেটেরিয়ার নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ এখনো শুরুই হয়নি।

এখানে নিয়মিত প্রাতঃ ভ্রমন করতে আসা নিকোলাস গোমেজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাহাদুরশাহ পার্ক পুরান ঢাকার মানুষদের বিনোদন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে অন্যতম। আমি সহ পুরান ঢাকার অনান্য লোকজনও এখানে এসে প্রাতঃ ভ্রমণ করেন। কিন্তু সংস্কারের নাম করে দীর্ঘদিন ধরে এটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ভিতরের কাজেরও কোন অগ্রগতি নেই। এতে করে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি।

কাজ বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাহাদুর শাহ পার্কে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী লুৎফর রহমান বলেন, এর সাথে আরো নতুন কিছু কাজ যুক্ত হওয়ায় কাজের মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে। এজন্যই কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
জানা যায়, আঠারো শতকের শেষের দিকে এখানে ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজরা এটি কিনে নেয়। তারা এটিকে একটি পার্কের রূপ দেয় এবং এর চারদিকে লোহার বন্ধনি দিয়ে ঘিরে দিয়ে এর চার কোণায় চারটি দর্শনীয় কামান স্থাপন করে।

১৯৫৭ সালের আগে পর্যন্ত পার্কটি ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর এক প্রহসনমূলক বিচারে ইংরেজ শাসকেরা ফাঁসি দেয় অসংখ্য বিপ্লবী সিপাহিকে। তারপর জনগণকে ভয় দেখাতে সিপাহিদের লাশ এনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এই ময়দানের বিভিন্ন গাছের ডালে। ১৯৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “বাহাদুর শাহ পার্ক”।

সিপাহী বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংরেজ শাসনের সমাপ্তি ঘটিয়ে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ এর শাসন পুনরায় আনার জন্য। তাই তার নামানুসারে এর নতুন নামকরণ করা হয় “বাহাদুর শাহ পার্ক”। বর্তমানে এটি বাহাদুর শাহ পার্ক নামেই পরিচিত।