দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বড় ধরনের মন্দার মধ্যে থাকলেও গত সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে চমক দেখিয়েছে বছরের পর বছর ধরে লোকসানে নিমজ্জিত বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। শেয়ারবাজারের পতনের মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম হঠাৎ বাড়াকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় কোম্পানিটি দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫০ পয়সা বা ২১ শতাংশ দাম বেড়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ২ টাকা ৮০ পয়সায় উঠে এসেছে।

হঠাৎ শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও বছরের পর বছর ধরে কোম্পানিটি লোকসানে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে ২০১৩ সালের পর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি আর্থিক খাতের এই প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে শেয়ারবাজারে ‘জেড’ গ্রুপ বা পচা কোম্পানির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে নিয়মিত লোকসান করা কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনেও বড় ধরনের লোকসানের চিত্র উঠে এসেছে। ডিএসইর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৪৮ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এতে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৭৯ পয়সা। লোকসানের পাশাপাশি সম্পদ মূল্যও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শেষে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৮৪ টাকা ২৪ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটির কানাকড়িও সম্পদ নেই, উল্টো দেনার দায়ে ডুবেছে।

এমন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম হঠাৎ বাড়াকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এই পতনের মধ্যে বিআইএফসির শেয়ার দাম বাড়া মোটেও স্বাভাবিক না। কোনো চক্র হয় তো কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়িয়ে ফায়দা হাতানোর পায়তারা চালিয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহে বিআইএফসির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষ ছিল কহিনুর কেমিক্যাল।

ফলে সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার মূল্যে বড় ধরণের উত্থান ঘটেছে। অপরদিকে ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী কহিনুর কেমিক্যালের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে সপ্তাহেজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

এদিকে সপ্তাহজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার মূল্য বেড়েছে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৯৬ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫১৭ টাকা ৪০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৪২১ টাকা ৪০ পয়সা । কহিনুর কেমিক্যালের পরেই শেষ সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। সপ্তাহজুড়ে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

এর পরেই রয়েছে অ্যাপেক্স স্পিনিং। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। এছাড়া শেষ সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় থাকা- সি পাল বিচ রিসোর্টের ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, মুন্নু সিরামিকের ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, ওরিয়ন ফার্মার ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, ইনটেকের ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অ্যাপেক্স ফুডসের ৪ দশমিক ৭৮ শতংশ এবং এসিআই’র ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ দাম বেড়েছে।