দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কারোনাভাইরাস আতঙ্ক ও টানা দরপতনে পুঁজিবাজার জটিল পরিস্থিতিতে রয়েছে জানিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও ব্যাংকগুলো তা মানছে না। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা না মানার দুঃসাহস দেখাচ্ছে? শনিবার  রাজধানীর গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধস নামলে স্টেকহোল্ডারদের একটি অংশের দাবির প্রেক্ষিতে এবং সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধের সময় হবে পাঁচ বছর। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া এ সুবিধার পর এক মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও তহবিল গঠনে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। এক মাসে মাত্র তিনটি ব্যাংক তহবিল গঠন করেছে। এদিকে গত ১০ মার্চ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ওই বৈঠকে ব্যাংকের এমডিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংকগুলো তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে আইনি সমস্যায় পড়েছে।

তহবিল গঠনে ব্যাংকের সমস্যার বিষয়ে রকিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা জারির পর এক মাস কেটে গেছে। এতদিন কেন তারা এ সমস্যার কথা বলেনি? ব্যাংকের মালিক ও এমডিদের দুটি পৃথক সংগঠন আছে। তারা কেন এতদিন সমস্যার কথা জানতে চায়নি? প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ না মানার দুঃসাহস তারা কোথায় পেল?

এ সময় পরিচালকদের নিজ নিজ ব্যাংকের শেয়ার কেনার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো একের পর এক বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন ও শেয়ার বাড়িয়েছে। সে শেয়ার তারা বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেছে। এখন ব্যাংকের শেয়ার দাম অনেক কমে গেছে। এই পরিচালকদের কি ব্যাংকের প্রতি, বিনিয়োগকারীদের প্রতি কোনো মায়া লাগে না?

“একজন পরিচালক যদি ৫০টি করেও শেয়ার কেনার ঘোষণা দেন তাতেও বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাবেন। পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাংকের পরিচালকদের প্রতি অনুরোধ, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা এখন কম দামে শেয়ার কেনেন” বলেন ডিএসইর এ পরিচালক। ব্যাংক ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী- সংসদে জানানো হয়েছে এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে যোগসাজশ করে এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন।

পরিচালকরা পারস্পরিক যোগসাজশে যে টাকা নিয়ে গেছেন, তারা কী আদৌ সেই টাকা শিল্পায়নে বিনিয়োগ করেছেন? তারা কী আদৌ এ টাকা পরিশোধ করেন? ব্যাংকের পরিচালকরা নামে, বেনামে অথবা আত্মীয়স্বজন অথবা ভুয়া কোম্পানি দেখিয়ে অথবা তাদের কর্মচারীর নামে যে টাকা নিয়ে গেছেন তা আদায়ে ম্যানেজমেন্ট আইনি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি? এসব প্রশ্ন রাখেন রকিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে, দক্ষ ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ব্যাংক পরিচালনা করতে না পারলে এবং ব্যাংক ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে না পারলে, তা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কাজেই যারা নামে, বেনামে খেলাপি হয়েছেন আইনের আওতায় এনে অবশ্যই তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে হবে। এ টাকা আমানতকারীদের, এটা তাদের টাকা নয়।