দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বড় ও সেবা শিল্প এবং এসএমই প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন ঋণ জোগানে ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য তারল্য বাড়াতে তাদের বাধ্যতামূলক নগদ জমা সংরক্ষণের হারে (সিআরআর) বড় ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে দুই দফায় সিআরআর দেড় শতাংশ কমানো হয়েছে। আর তাতেই ব্যাংকগুলোর হাতে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বিনিয়োগযোগ্য তারল্য যোগ হলো।

এ ছাড়া সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সুদে তহবিল জোগানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার (রেপো রেট) দুই দফায় দশমিক ৭৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে রেপো ব্যবস্থায় মাত্র সোয়া ৫ শতাংশ সুদে তহবিল ধার নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। আজ রবিবার থেকে রেপোর এই নতুন সুদহার কার্যকর হবে। এদিকে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়াতে এডিআর সীমাও বাড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়। এর মধ্যে যে অংশ নগদে রাখতে হয়ে সেটিই সিআরআর। বাজারে টাকার চাহিদা বেশি থাকলে সিআরআর হার কমানো হয়। আবার টাকার চাহিদা কম থাকলে সিআরআর হার বাড়ানো হয়। অন্যদিকে যে সুদহারে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়, তা-ই রেপো রেট বা নীতি সুদহার। বাজারে নগদ তারল্যের জোগান বৃদ্ধি ও হ্রাসে মুদ্রানীতির এ গুরুত্বপূর্ণ টুলস ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি পূরণে গত রবিবার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বড় ও সেবা শিল্প এবং এসএমই প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণ সুবিধা রাখা হয়েছে। আর এই টাকা দিতে হবে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উৎস থেকে। এ ক্ষেত্রে তারল্য নিয়ে যাতে কোনো সংকট তৈরি না হয় সে জন্য ব্যাংকগুলোতে টাকার সরবরাহ বাড়াতে সিআরআর ও রেপো রেট কমিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

জানা যায়, গত ২৩ মার্চ প্রথম দফায় তফসিলি ব্যাংকগুলোর সিআরআর দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছিল, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়। আর গত বৃহস্পতিবার সিআরআর আরো ১ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমানে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে তাদের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের ন্যূনতম ৫ শতাংশ দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে এবং ন্যূনতম ৪.৫ শতাংশ দৈনিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা রাখতে হয়।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি ঘোষিত বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে মুদ্রাবাজারে প্রয়োজনীয় তারল্য সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ জন্য আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে নগদ জমার হার (সিআরআর) দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ন্যূনতম ৪ শতাংশ ও দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৩.৫ শতাংশ হবে।

সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে প্রায় ১৩ লাখ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। দুই দফায় দেড় শতাংশ সিআরআর হার কমানোর ফলে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা কম সংরক্ষণ করতে হবে সিআরআর। এর পুরো অর্থই ব্যাংকগুলোর হাতে চলে যাবে। এতে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়ে যাবে এবং এই টাকা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা তহবিলের আওতায় বড় ও এসএমই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন ঋণ জোগানে ব্যবহার করতে পারবে ব্যাংকগুলো।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদন প্যাকেজ বাস্তবায়নের নীতি সুদহার কমানো হয়েছে। গত ২৩ মার্চ প্রথম দফায় নীতি সুদহার (রেপো) ৬ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৫.৭৫ শতাংশ করা হয়, যা ২৪ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে। আর গত বৃহস্পতিবার আরো দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে এখন রেপো রেট নেমে এসেছে ৫.২৫ শতাংশে।