আহসান আমীন: মা শব্দটি মনে আসলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে স্নেহ, আদর-মমতার এক ছবি। অকৃত্রিম ভালোবাসার এই সম্পদ মা, কখনো ছোট্ট পুকুর যেখানে দিনরাত সাঁতার কাটে ভালবাসার নৌকা, আবার কখনো মমতার শীতল ছায়া। সন্তানের জন্য মা সব পারেন। সহিষ্ণু, নিরলস ও সার্থকভাবে সংসারের হাল ধরার পরও সন্তানের জন্য মা হয়ে উঠেন জননী থেকে অসাধারণ জননীতে।

মায়ের প্রতি সন্তানের যে ভালোবাসা, তা প্রকাশের সুযোগ হয়ে ওঠে না সিংহভাগ মানুষেরই। মায়ের কাছে না বলা কথাগুলো পৌঁছে দেবার বিশেষ উপলক্ষ এই বিশ্ব মা দিবস । যার শুরুটা হয়েছিল, উনিশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবস্টার জংশনের বাসিন্দা আনা জার্ভিসের তার মায়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে। গ্রীক সভ্যতায় বসন্তের এই বিশেষ দিনটিকে বলা হত ‘মাদার অফ গড’।

একজন মা সন্তান কে এতই ভালবাসে যে , তাঁর নাড়ি চেড়া ধন ভাল থাকলে তখন সে মায়ের চোখে তন্দ্রা আসে । আর সন্তানের দুঃখ শুনলে সেই ব্যথায় ব্যাথিত হয়ে লজ্জাবতি পাতার মত দেহ ও মন টা অবসন্ন হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে ।কারন এই পৃথিবীতে মায়ের মত নিঃস্বার্থ ভালবাসা আর কেউই দিতে পারে না । সবাই কর্ম দেখে ভালবাসে আর সেটা না থাকলে তার জন্য আর কার ভালবাসা থাকে না । যেমন চাঁদ কে কেউ ভালবাসে না কিন্তু চাদের আলোকে সবাই ভালবাসে ।

মা , তুমি বিশ্বাস কর আমি এখন অনেক বড় হয়েছি । নিজের মনের হাজারো ব্যাথা , দুঃখ কষ্ট গুলো এখন নিজের মাঝেই লুকায়ে রাখতে পারি ।যত বড় ঝড় তুফান বা সুনামিই আমার জীবনে আসুক না কেন সব সময় হাসি মুখে ঐ সব আমার আয়ত্তে আনতে চেষ্টা করি ।তখন মা তুমি শুধুই বলতে আমি তোমার বোকা ছেলে, আমি কিছুই বুঝি না ।এখনো মা, আমার সরলতাকে আমার দুর্বলতা মনে করে অনেকে আমাকে কষ্ট দেয় ।মা আমাকে মানুষ এমন বিষয় নিয়ে অপরাধী বলে কষ্ট দেয় যা আমি আদৌ করিনি । তাও মা আমি আল্লাহর সাহায্যে সব হজম করে ফেলি ।

মাগো জানো, আজ এই দূর থেকে তোমায় ভীষন মনে পড়ছে।বার বার তোমার কথা মনে পড়ছে আর বুকের ভিতর অনেক দিনের মমতার শূন্যতা অনুভব করছি। আজ অনেকদিন হলো মা বলে ডাকতে পারছি না। মাগো এখন আর তোমার মত করে আদর করে কেউ ডাকে না। যখন তোমায় অনেক বেশী মনে পড়ে তখন আকাশের ঐ চাঁদটার দিকে তাকিয়ে ভাবি যে, পৃথিবীর অন্যপ্রান্ত থেকে তুমিও হয়তো চাঁদটাকে দেখছো আর তোমার এই অধম সন্তানটির কথা ভাবছো।

মাগো যখন নিজেকে বড়ই একা আর দুনিয়াটাকে স্বার্থপর বলে মনে হয় তখন তোমাকে অনেক মনে পড়ে। বেলকুনিতে বসে তোমার কথা ভাবি আর ছল ছল চোখ দুটো দিয়ে অঝরে জল গরিয়ে পড়ে।”মা” শব্দটা যে কতটা আপন তা আগে বুঝতে পারিনি। একটি মহূর্তের জন্যও তোমাকে ভুলতে পারি না। মেহেরবান খোদার নিকট একটাই মিনতি যেন মৃত্যুর পূর্বমহূর্ত পর্যন্ত তোমায় ভুলে না যাই।

“মা” মাগো , তোমায় জানা অজানা কতইনা কষ্ট দিয়েছি। সেই গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকে আজ অবধী তোমায় কত যন্ত্রনা কত কষ্ট দিয়েছি।তুমি শুধুই মুখ বুজে সহ্য করেছো কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করোনি। ছোটবেলায় কতবার তোমার কোলে মলত্যাগ করেছি। অবহেলায় দূরে ফেলে দাওনি বরং পরম মমতায় আর আদরে মেনে নিয়েছো। কপালে কালো টিপ এঁকে দিয়েছো।গাল দুটোতে চুমু খেয়েছো।

আমাকে রক্ষা করার জন্য তাবিজ বেঁধে দিয়েছিলে।ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে গেলে তোমায় না দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠেছি, তুমি সকল কাজকর্ম ফেলে আমার কাছে ছুটে এসেছো। পরম আদরের সাথে বুকে তুলে নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছো। তুমি জানোনা মা তোমাকে ক্ষণিকের জন্য না দেখতে পেলে বুকের ভিতরটায় গলা কাঁটা কবুতরের মত ছটফট করে উঠতো। আমি জানি আমার জন্য তোমারও ঠিক একই অনুভূতি ছিলো এবং এখনো আছে।

তোমার মনে পড়ে ছোটবেলায় তুমি আমাকে কোলে নিয়ে সারাবাড়ি ঘুর বেড়াতে। জানো মা তখন আমি কি ভাবতাম? আমি ভাবতাম যে, যখন আমি বড় হয়ে যাব তখন আমি তোমাকে কোলে নিয়ে সাড়াবাড়ি ঘুরাবো। আমি কতটা বোকা ছিলাম তাই না? মাগো অনেক মনে পড়ে তোমায়, বলে বুঝাতে পারবো না। তুমি ছোটবেলা কত আমাকে দোলনায় দোল খাইয়েছো।

দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে “ফুক্কি” নামক শব্দটি দ্বারা আমাকে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেছো। যখন মুখের বুলি ফুটতে শুরু করে তখন মা ডাকটি শোনার জন্য কতবার বলেছো,”বলো মা, এইতো শোনা আবার বলো মা।” মাগো সত্যি বলছি “মা” শব্দটা তোমার এত প্রিয় জানলে খোদার কাছে অনুরোধ করতাম যেন জন্মের পর পরই মা বলে ডাকতে পারতাম।

‘মা’ একটি শব্দ। একটি মমতার নাম। কিন্তু এর ব্যাপ্তি ভুবনজুড়ে। এক কথায় ত্রিভুবনের সবচেয়ে মধুরতম শব্দ ‘মা’। কবি কাজী কাদের নেওয়াজ যথার্থই লিখেছেন ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি/কিন্তু জেনো ভাই/ইহার চেয়ে নাম যে মধুর/ত্রিভুবনে নাই।’ আসলেই মায়ের মতো কেউ আপন নয়, কস্মিনকালেও কেউ হতে পারে না। নির্দ্বিধায় বলা যায়, ‘মা’ তার সহজাত মমত্ব দিয়ে আমৃত্যু সন্তানকে আগলে রাখেন অসামান্য দরদে। সন্তানের রোগে-শোকে মা-ও তাই আক্রান্ত হন।

আজ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছর এই দিনটি আমাদের স্মরণ করে দেয় মায়ের মর্যাদার কথা। প্রতিটি সন্তানের মধ্যে কাজ করে মাকে ভালোবাসার ও তার কাছে ঋণের কথা ভেবে উদ্বেল হওয়ার বাড়তি প্রেরণা। দিনটিতে তারা অনেকেই মাকে কিছু না কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করেন। ছুটে গিয়ে মায়ের আঁচলতলে আশ্রয় নেন। কেউবা দূরে থাকা মায়ের ছোঁয়া পেতে দ্বারস্থ হন টেলিফোনের। হচ্ছে আর যারা ইতিমধ্যেই মা-কে হারিয়েছেন তারা স্রষ্টার কাছে দু’হাত তুলে অশ্রুপাত করেন।

জীবন চলার পথে এতাটুকু বুঝেছি জগৎ সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালবাসা আমার সমস্ত বেদনা দূর করে দেয় সেই মানুষটিই হলো আমার ‘মা’। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মা-ই সন্তানের একমাত্র নিঃস্বার্থ বন্ধু। দুঃখে-কষ্টে, সংকটে-উত্থানে যে মানুষটি স্নেহের পরশ বিছিয়ে দেয় তিনি হচ্ছেন আমার সবচেয়ে আপনজন ‘মা’।

একটি কথা সকলেই আমার সাথে এক বাক্যে স্বীকার করবেন যে, প্রত্যেকটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে উঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা মায়ের। পৃথিবীর প্রতিটি মা যদি সহিষ্ণু, মমতাময়ী, কল্যাণকামী না হতেন তবে মানব সভ্যতার চাকা শ্লথ হয়ে যেত। জন্মের সূচনাপর্ব থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মায়ের অবদান অতুলনীয়।

আহসান আমীন।