দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে। শাস্তি ভোগ করেছেন। তার আগে পাপের জন্য সবার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। তবে নিষিদ্ধ থাকার সময়টা মোহাম্মদ আশরাফুলের জন্য হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। এমনকি এক পর্যায়ে আত্মহত্যার চিন্তাও মাথা এসেছে তার।

বৃহস্পতিবার একটি ইউটিউব চ্যাট শো-তে আশরাফুল ফিরে তাকালেন ফেলে আসা কঠিন সময়গুলোর দিকে। বলেন, ‘কাল আমাকে একজন বলছিলেন, করোনার কারণে আমরা এখন সবাই ঘরবন্দী। আপনার কাছে কেমন লাগছে? আমি বললাম, আমার কাছে ততটা কঠিন মনে হচ্ছে না। কারণ, আমি এর থেকেও কঠিন সময় কাটিয়েছি আমার ওই নিষেধাজ্ঞার সময়ে।’

কতটা কঠিন সেটা ফোটে ওঠে আশরাফুলের এই কথায়, ‘এমনও আমার মাথার মধ্যে এসেছিল যে আমি বেঁচে থাকবো কিনা, সুইসাইড করব কিনা। এই ধরনের চিন্তাও আমার মধ্যে এসেছে।’ ‘আমি কীভাবে মানুষের কাছে মুখ দেখাব, পরিবার কীভাবে থাকবে। আমি এটা নিয়ে খুব আপসেট ছিলাম।’- যোগ করেন আশরাফুল।

সেই কঠিন সময় কীভাবে কাটিয়ে উঠলেন সেটিও জানিয়েছেন আশরাফুল। বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমি ২০১৩ সালে হজ করতে গেলাম। এরপর আমার দুলাভাইয়ের সঙ্গে শেয়ার করলাম। উনি কিছু পজিটিভ কথা বলেছিলেন। ক্রিকেট বোর্ডের সিইও সুজন ভাই (বিসিবির সিইও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন), উনারা আমাকে প্রচুর সাপোর্ট করেছেন। বলতেন, তোমার এখন বাজে সময় যাচ্ছে। সময়ই তোমাকে সব চেঞ্জ করে দেবে।’

আশরাফুল এরপর নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছর প্রাইভেট খেলাগুলো খেলে গেছেন। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সিলেট অঞ্চলের প্রতিও। যেখানে অনেক ম্যাচ খেলে সময় কাটিয়েছেন সেই সময়। এক পর্যায়ে নিজেকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার প্রেরণাও তার মনে ধরা দিয়েছে।

২০১৩ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। নিজেই আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট- আকসুর কাছে স্বীকার করেন সব।

শাস্তি হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা পান আশরাফুল। শর্ত সাপেক্ষে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার অনুমতি পান আগেই। তবে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা ওঠে ২০১৮ সালে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্মও করেছেন। কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ মেলেনি। যেটিই তার আসল স্বপ্ন। যা নিয়ে আক্ষেপ আছে আশরাফুলের মনে।

কিন্তু যে আশরাফুল ছিলেন সবার হৃদয়ে, সেই আশরাফুলের এরকম অপরাধে জড়িয়ে যাওয়াও তো মেনে নিতে পারেননি অনেকে। তাই সবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরও, শাস্তি ভোগ করার পরও আশরাফুল এখনও কারো কারো চোখে অপরাধী। নিজেও বিষয়টা অনুধাবন করেন আশরাফুল।

তবে যারা এখনও ঘৃণা পোষে রেখেছেন, আশরাফুল তাদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, ‘আমি কিন্তু কোনো ম্যাচ ফিক্সিং করিনি। হ্যাঁ আমি বিপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এগুলো আমি অন্যায় করেছি এবং সবার কাছে বলেছি। ভুল মানুষের হতেই পারে। অনেকে হয়তো ক্ষমা করেছে, অনেকে হয়তো ক্ষমা করেনি।’

‘তারপরও আমি বলব, আমি ভাগ্যবান যে মুশফিকের একটা টেক্সট পেয়েছিলাম- ‘‘আশরাফুল ভাই, আপনি নিজে থেকে বলে সবার কাছে মাফ চেয়েছেন। এর থেকে আর বড় কিছু হতে পারে না।’’

ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে অপরাধ বোধ থেকে নিজে স্বীকার করেছেন। স্বীকার না করলে হয়তো বেঁচেও যেতে পারতেন। কিন্তু স্বীকার করা নিয়ে আশরাফুলের কোনো আক্ষেপ নেই। বরং বলছেন, আমি এখন ভালো ঘুমাতে পারি। ‘এটা যদি লুকিয়ে থাকতো, অনেকের অবসরের পরে কিন্তু আমরা এ ধরনের অনেক ঘটনা দেখি। আমি যদি না স্বীকার করতাম, তাহলে হয়তো বা কিছুই হতো না। কিন্তু আমি এটা ফিল করি না যে আমি কেন স্বীকার করলাম। আমি ফিল করি, আমি এখন অনেক আরামে ঘুমাতে পারি।’ সুত্র: দেশ রুপান্তর