মিজানুর রহমান: মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর আগামীকাল রোববার (৩১ মে) থেকে দেশের পুঁজিবাজারে আবার লেনদেন চালু হচ্ছে। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও পুঁজিবাজারে আবার লেনদেন চালু করার সিদ্ধান্তে খুশি বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউস কর্মীরা। তবে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের মাঝে প্রশ্ন কেমন হবে পুঁজিবাজার।

আবার অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কেমন হবে আগামী দিনের পুঁজিবাজার। এসব নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের মত সাধারন বিনিয়োগকারীদের মাঝে। তবে বর্তমান পুঁজিবাজার কি কি কারনে ভালো হতে পারে, তার কিছু অংশ নিচে তুলে ধরা হলোঃ

আরও পড়ুন…….

বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকছে চমক: বিএসইসি চেয়ারম্যান 

পুঁজিবাজারকে যে কোনো মুল্যে শক্তিশালী বাজার গড়ে তোলা হবে: শিবলী রুবাইয়াত 

পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুতে বিএসইসির অনাপত্তি 

১। পূর্বের কমিশনের উপরে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের অনাস্থা ছিল। সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল কমিশন বিদায় নেয়ার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে, যার ইতিবাচক প্রভাব বাজারের উপর পড়তে পারে।

২। নতুন চেয়ারম্যান পুঁজিবাজার ভালো করার ব্যাপারে ইতিমধ্যে অনেকগুলো ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন।তেমনি বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।যা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক দিক।

৩। সামনে বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো কিছু থাকছে বলে ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছেন নতুন চেয়ারম্যান। যা বাজারের জন্য ইতিবাচক। নতুন কমিশন তাদের প্রথম মিটিংয়ে বন্ড মার্কেট চালুর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন, যা পুঁজিবাজারের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক দিক।

৪। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এতে করে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কঠিন হয়ে গেছে। এবার ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক স্কিমে বিনিয়োগের লাগাম টানল সরকার। এ খাতের একক নামে বিনিয়োগ ঊর্ধ্বসীমা ৩০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর যুগ্ম-নামে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ৬০ লাখ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। সঞ্চয় হিসাবে লাগাম টেনে ধরেছে সরকার। ফলে এ খাতের বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে পারে।

৫। বাজার কে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রত্যেকটি ব্যাংককে ২০০(দুইশত) কোটি টাকা করে তহবিল গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে আট/দশটি ব্যাংক নির্দেশনা অনুযায়ী তহবিল গঠন করে ফেলেছে যা পুঁজিবাজারে তারল্য সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।

আরও পড়ুন…….

 করোনা ভাইরাসে আরও ২৮ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৭৬৪ 

করোনা ভাইরাসের ‘হটস্পট’ ঢাকা নগরী, ১৫ হাজার ৫৫৩ জন শনাক্ত 

করোনা টেস্টে বাড়তি টাকা নিচ্ছে স্কয়ার ও মর্ডান হাসপাতাল 

৬। বাজারে এখন ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া আছে এখান থেকে নিচে নামার সুযোগ নেই, তাছাড়া গত দশ বছরের মধ্যে বাজার এখন সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে, এখান থেকে এমনিতেই ঘুরে দাঁড়াবে।  অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাতের শেয়ার গুলো আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সহায়তা করবে।

৭। বৈশ্বিক মহামারী পূর্ববর্তী দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি খাত টেক্সটাইলের কিছু অর্ডার বাতিল হলেও বর্তমানে বায়াররা আবার অর্ডার দেওয়া/পূর্বের অর্ডারের পণ্য নেওয়া শুরু করেছে। প্রতিটি ফ্যাক্টরি পুরোদমে উৎপাদন চলছে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক।

৮। বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে ঔষধ খাত। যা পুঁজিবাজারের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক। বৈশ্বিক মহামারীর কারনে বিত্তশালীদের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়েছে, ঐসকল বিনিয়োগের কিছু অংশ পুঁজিবাজারে চলে আসতে পারে।

৯। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক লোন এর পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে বিকল্প অর্থায়নের কথা ভাবছে সরকার যা ইতিমধ্যে নতুন চেয়ারম্যানের বক্তব্য ফুঁটে উঠেছে।

১০। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে আনার ব্যাপারে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার, যার ফলে আস্থা ফিরে আসবে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের উপর ভর করে অচিরেই প্রতিটি খাত তাদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নতুন উদ্যমে উৎপাদন শুরু করবে যা যথেষ্ট ইতিবাচক।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সর্বোপরি বর্তমানে অর্থনীতির অন্যতম এই খাতকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে তদারকি করা হচ্ছে যার উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীরা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন।