দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নিলামে শেয়ারের কাঙ্খিত দরপ্রস্তাব না পাওয়ায় আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) ফিরিয়ে নিতে চায় ডেল্টা হসপিটাল লিমিটেড। বুক বিল্ডিং পদ্ধতির ইতিহাসে সবচেয়ে কম প্রিমিয়াম পাওয়ায় আইপিওতে ডেল্টা হসপিটালকে বেশি শেয়ার ছাড়তে হচ্ছে। এতে করে আইপিও-পরবর্তীতে ন্যূনতম শেয়ার না থাকায় কোম্পানিটির ১০ শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের সাতজনকেই পদ হারাতে হবে। এছাড়া সম্পদ মূল্যের তুলনায় শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস অনেক কম হওয়ায় আইপিও ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ বলে কোম্পানিটি জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও আইপিও ফিরিয়ে নিতে ডেল্টা হসপিটাল আবেদন জমা দিয়েছে। ডেল্টা হসপিটালের কোম্পানি সচিব আল মামুন আইপিও ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদনের কথা স্বীকার করেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতালের আয় মারাত্মক অবনতির কথা উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়েছে, আইপিও-পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদিও বিদ্যমান আইনে নিলামের পর আইপিও ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুন…….

এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের আইপিও আবেদন শুরু ১৪ জুন 

বিদেশীদের শেয়ার বিক্রির চাপ ও লকডাউন বাড়ার গুজবে পুঁজিবাজারে দরপতন

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, আইন অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের পর আইপিও ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে যেহেতু কোম্পানি আবেদন করেছে, তাই বিষয়টি এখন কমিশন বিবেচনা করে দেখবে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নিলামে শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকার সঙ্গে মাত্র ১ টাকা প্রিমিয়াম যোগ করে ডেল্টা হসপিটালের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়, যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এতে করে কোম্পানির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারিত হয় মাত্র ১১ টাকায়। কাট-অফ প্রাইস থেকে আবার ১০ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে ডেল্টা হসপিটালকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ইস্যু করতে হবে। এর আগে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সবচেয়ে কম প্রিমিয়াম (২০ টাকা) পেয়েছিল এডিএন টেলিকম লিমিটেড।

আইপিও ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আল মামুন বলেন, নিলামে আমরা কাক্সিক্ষত দর পাইনি। এতে করে আমাদের কোম্পানির ক্ষেত্রে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেটা হলো আমাদের এখন বেশি পরিমাণের শেয়ার অফলোড করতে হবে। আর তা করতে হলে আমাদের বেশিরভাগ পরিচালককে তাদের পদ ছাড়তে হবে। কারণ আইপিও-পরবর্তীতে বেশিরভাগ পরিচালকের শেয়ারহোল্ডিং ২ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। আইপিও ফিরিয়ে নেওয়ার এটি বড় কারণ।

আরও পড়ুন…….

কাপড়ের মাস্ক করোনা প্রতিরোধে বৈজ্ঞানিক সমাধান 

এছাড়া আমাদের কোম্পানির কাট-অফ প্রাইস যেটা নির্ধারিত হয়েছে, তা আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে কম প্রিমিয়াম দেওয়া হয়েছে। অথচ আমাদের সম্পদ মূল্য কাট-অফ প্রাইসের তুলনায় অনেক বেশি। আমরা মনে করছি, আইপিও ছাড়া হলে কোম্পানি ও এর উদ্যোক্তা পরিচালকরা ঠকবেন।

তবে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী নিলামের পর কোম্পানি আইপিও ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোম্পানি এ ধরনের আবেদনই করতে পারে না। এসইসি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইপিও ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। কোম্পানি সব ধরনের শর্ত নিয়ে আইপিওর আবেদন করেছে এবং কমিশন তাতে সম্মতি দিয়েছে। এখন বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে নিলামের পর এতে পাবলিক পার্টিসিপেশন হয়ে গেছে। এখন ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কমিশন চাইলে যেকোনো পর্যায়েই আইপিও বাতিল করতে পারে।

ডেল্টা হসপিটালের আইপিও প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, আইপিও-পূর্ববর্তী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৩৩ কোটি ২১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪০ টাকা। কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে আইপিওতে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব দিয়েছে। গত ২২ মার্চ বিকেল ৫টা থেকে ডেল্টা হসপিটালের শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে বিডিং বা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়, যা ২৫ মার্চ বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কোম্পানির কাট-অফ প্রাইস ১১ টাকা নির্ধারণ হয়। তবে এ নিলামে শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপ্রস্তাব ওঠে ৪৬ টাকা।

নিলামে সর্বোচ্চ থেকে কাট-অফ প্রাইস পর্যন্ত দর প্রস্তাবকারীরা তাদের প্রস্তাবিত দরে ৩১ কোটি ৫৪ লাখ ২৯ হাজার টাকার শেয়ার কিনবেন। আর কাট-অফ প্রাইস থেকে ১০ শতাংশ কম দরে বা প্রতিটি ১০ টাকা করে ১৮ কোটি ৪৫ লাখ ৭১ হাজার টাকার শেয়ার আইপিওতে ইস্যু করা হবে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও পরবর্তীতে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ৭০ কোটি টাকা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তাই কোম্পানিটিকে নতুন করে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৬টি শেয়ার ছাড়তে হবে। আর কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকসহ বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ৩ কোটি ৩২ লাখ ১২ হাজার ৬৯৪টি শেয়ার রয়েছে। এর ফলে আইপিও-পরবর্তীতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার থাকার কথা। ডেল্টা হসপিটালের উদ্যোক্তা রয়েছেন ১৯ জন। অবশিষ্ট শেয়ার রয়েছে ২১০ জন শেয়ারহোল্ডারদের হাতে।

ডেল্টা হসপিটালে বর্তমানে ১০ জন পরিচালক রয়েছেন, যাদের সম্মিলিত শেয়ারধারণের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ১১ শতাংশ। আইপিও ছাড়তে হলে এসব পরিচালকের মধ্যে সাতজনকেই পদ ছাড়তে হবে। কারণ আইপিও-পরবর্তীতে উল্লিখিত সাত পরিচালকের শেয়ার দুই শতাংশের নিচে নেমে আসবে। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ন্যূনতম শেয়ার না থাকলে সংশ্লিষ্ট পরিচালক কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না।

৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী ডেল্টা হসপিটালের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ) দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকা ৮৪ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি নিট সম্পত্তি মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ব্যতীত) দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৬২ পয়সা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ১০ পয়সা।