দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশে ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ দ্রুত হারে বাড়ছে। ব্যাংক হিসাবের তথ্যানুযায়ী দেশে ১ কোটি বা তারচেয়ে বেশি টাকার আমানত রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্পদ ১০ শতাংশ বা ৪৮ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা বেড়েছে। এর ফলে ২০১৯ সালে ৮৩ হাজার ৮৩৯ জনে উন্নীত হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৮ হাজার ২৭৬ জন। গত ১১ বছরে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ২০৩ জন বা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি জুন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতিদের ব্যাংক হিসাবে রাখা আমানতের পরিমাণ বেড়ে দঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা।

রও পড়ুন…

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে জিম্মী পুঁজিবাজার 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২১১। এর মধ্যে ১ কোটি বা তারচেয়ে বেশি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৮৩৯। ২০১৮ সালে দেশে ১ কোটি বা তারচেয়ে বেশি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৫৬৩। এক বছরে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১১ শতাংশ। আর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাব ছিল ৭৯ হাজার ৮৭৭। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কোটিপতিদের হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৯৬২।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজার ইস্যুতে হার্ডলাইনে বিএসইসি, অনিয়ম করলে ব্যবস্থা 

 

মোট ব্যাংক হিসাবের শূন্য দশমিক শূন্য ৭৯ শতাংশ হচ্ছে কোটিপতিদের। যদিও দেশের মোট ব্যাংক হিসাবের একটি ক্ষুদ্র অংশ কোটিপতিদের হলেও মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ টাকাই তাদের দখলে। ২০১৯ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে কোটিপতি সংখ্যাবৃদ্ধির এই হার ইঙ্গিত দেয় যে, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, আর গরিবরা আরও গরিব। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ও সামাজিক ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই জাতীয় বৈষম্য দেশের প্রাথমিক উন্নতির সময়ে বাড়তে থাকে, যা পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে কমে আসে।

রও পড়ুন…

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ১১ বছরে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ২০৩ জন বা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০০৯ সালের মার্চে দেশে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৬৩৬ জন। ২০০৯ সালের পর ব্যাংকে রাখা কোটিপতি আমানতকারীদের টাকার পরিমাণ ৭৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা থেকে পাঁচগুণ বেড়ে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৩১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৫ জন, যা ১৯৭৫ সালে ৪৭ জনে উন্নীত হয়। দেশে কোটিপতিদের সংখ্যা ১৯৮০ সালে ছিল ৯৮ জন, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২ জন, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩ জন ছিল।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের যৌথ সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পরে শহুরে বস্তিবাসী এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের গড় আয় ৮০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এমন জনগোষ্ঠীর ৬৩ শতাংশ যারা বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তারা অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণা বলছে, প্রবৃদ্ধি শতকরা ৫ ভাগ লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যার কারণে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, মানে বড়লোক বাড়ছে। সাধারণ জনগণ প্রবৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না। যার প্রমাণ করোনার মধ্যে পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৫ হাজার ৯১৯টি। বছরের ব্যবধানে এ অঙ্কের হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ৬৬১টি। এর আগে ২০১৮ সালে যা ছিল ৫৯ হাজার ২৫৮টি। এছাড়া ডিসেম্বর শেষে ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির মধ্যে ৯ হাজার ৪২৬ জন, ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটির মধ্যে ৩ হাজার ১৮৪ জন, ১৫ কোটি ১ টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৪৭২ জন, ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ৯৯৭ জন, ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে ৫৮৮ জন, ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২৪৬ জন এবং ৩৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে ৩৮৪ জন আমানতকারীর হিসাব রয়েছে। গত এক বছরে ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮৪টি, যা ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছিল ৩৫৮টি।

আলোচিত সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ২৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালে যা ছিল ১ হাজার ১৪৮ জন। অর্থাৎ এক বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩৫ জন।