দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রায় সব ঋণেরই সুদহার কমে গিয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ ও আমানত ছয় শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সুদহার কমে যাওয়ার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদহার কমে গিয়েছে। এরপর আবার করোনার অভিঘাত শুরু হয়েছে। করোনার নেতিবাচক প্রভাবে কমেছে ব্যাংকের মুনাফা। করোনার সময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। পুরাতন ঋণ আদায়ও হয়নি।

আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য কম হওয়ায় এ থেকে প্রাপ্ত কমিশন থেকেও ব্যাংকগুলো বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে ঝুঁকিভাতাসহ সুরক্ষা সামগ্রী কিনতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়েছে। বুধবার ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাস শেষ হয়েছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলোর হিসাব থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে হঠাৎ লেনদেন বৃদ্ধির নেপথ্যে আইসিবি

ব্যাংকগুলো কিছুদিন পরে তাদের বার্ষিক অনিরীক্ষিত আর্থিক ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে পেশ করবে। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এর আগে তা প্রকাশের ওপর এসইসির বিধিনিষেধ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত (নিট) মুনাফা নয়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই কোনো ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) এবং সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।

বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে পরিচালন মুনাফার যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। ব্যাংকগুলোর প্রাথমিক হিসাব ও প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বছরের প্রথম ছয় মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো ভাল মুনাফা করেছে। বেসরকারি অন্যান্য ব্যাংকের মত ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতেও আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বলে ব্যাংকগুলো নিশ্চিত করেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ ব্যাংকই সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনেছে বলে ঘোষণা করেছে। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনলে ব্যাংকের বেশি লাভ করার সুযোগ থাকে না। ফলে প্রায় সব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে।

ব্যাংকারদের অনেকেউ জানিয়েছেন, কাগজে কললে যে দেখানো হয়েছে প্রকৃত অবস্থা আরো খারাপ। ব্যাংকগুলোর স্থিতিপত্রের স্বাস্থ্য ভালো দেখানোর জন্য পরিচালন মুনাফা বাড়িয়ে দেখানোর একটা প্রবণতা আছে। এর পরের ধাপে গেলেই প্রকৃত পরি¯ি’তি বোঝা যাবে। প্রভিশন করলেই বোঝা যাবে কোন ব্যাংকের মুনাফা কেমন।

জুন মাস শেষে ব্যাংকগুলো অর্ধবছরের হিসাব করে। ‘জুন ক্লোজিং’ বা এই ৬ মাসে ব্যাংকগুলো কেমন মুনাফা করলো তা বোঝার চেষ্টা করে। অবশ্য প্রকৃত কাজ শেষ হতে আরো কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাংকের তথ্য হাতে এসেছে তাতে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। তবে কয়েকটি ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে বলেও দেখা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) পরিচলন মুনাফা গতবারের চেয়ে বেশি করেছে রূপালী ব্যাংক। ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ১৩০ কোটি টাকা। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৭৫ কোটি। অগ্রণী ব্যাংক ৫১২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৩১ কোটি টাকা। বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৪২ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৫০৬ কোটি টাকা।

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। শাহ জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৩২৫ কোটি টাকা।

পূবালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪০৫ কোটি টাকা, বছরের এই সময়ে যা ছিল ৫৪০ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৪৩ কোটি টাকা, বছরের এই সময়ে যা ছিল ৩৩১ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে ৯০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। বছরের এই সময়ে যা ছিল ৮৯ কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ২৭৮ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৩৬২ কোটি থেকে নেমে হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংক আগের বছরের প্রথম ছয়মাসে ২৬৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। এবছরে তা হয়েছে ২০২ কোটি টাকা।

যমুনা ব্যাংকের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৮০ কোটি টাকা। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৩১০ কোটি। মধুমতি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৯৮ কোটি। এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৩৩০ কোটি টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩১৭ কোটিতে। সাউথ বাংলা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৯০ কোটি। মেঘনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে মাত্র ১২ কোটি টাকা, গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৪৫ কোটি টাকা।