দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে খেলাপি ঋণ নিয়মিতকরণের সুবিধা পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে করোনায় কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি না করার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনারও প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে। এসব কারণে খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি তুলনামূলক কম রাখতে হচ্ছে। ফলে করোনাসংকটে ব্যাংকগুলোর সব ধরনের আয় কমলেও সঞ্চিতি কম রাখতে হওয়ায় নিট মুনাফা ধরে রাখতে পারছে অনেক ব্যাংক।

রও পড়ুন…

ফ্লোর প্রাইস নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ নেই: অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত 

পৃথিবীর একমাত্র পুঁজিবাজারে শেয়ারের দর বাড়লেই তদন্ত! 

পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগের সঠিক সময়, লেনদেনে চমক আসছে: বিএসইসি চেয়ারম্যান 

চলতি প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) যমুনা ব্যাংকের সব ধরনের আয় কমলেও নিট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বাড়তে দেখা গেছে। যদিও দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ঋণের সুদহার ১ অঙ্কে নামিয়ে আনা ও করোনার প্রভাবে ব্যাংকটির সব ধরনের আয় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে করে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির নিট মুনাফা কমেছে ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

যমুনা ব্যাংকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে ব্যাংকটি মন্দমানের ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছিল ৬০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পরবর্তী সময়ে নামমাত্র ডাউনপেমেন্টে খেলাপি ঋণ নিয়মিতকরণের সুযোগ দেওয়ায় এ খাতে ব্যাংকগুলোর সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণ কমে আসে। এর ফলে চলতি অর্ধবার্ষিকীতে যমুনা ব্যাংক মন্দমানের ঋণের বিপরীতে মাত্র ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছে। এর ফলে এক বছরের ব্যবধানে মন্দমানের ঋণে সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণ কমেছে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে অবলোপন করা ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতিও ব্যাপক মাত্রায় কমেছে।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ব্যাংকের কোন সমস্যায় নেই: আজম জে চৌধুরী 

অবশ্য পুঁজিবাজারে মন্দা থাকায় এ খাতের বিনিয়োগের বিপরীতে সঞ্চিতির পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে বিনিয়োগের লোকসান বাবদ ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা সঞ্চিতি রাখতে হয়েছে যমুনা ব্যাংককে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে চলতি প্রথমার্ধে বিভিন্ন খাতে সঞ্চিতি বাবদ যমুনা ব্যাংক ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা সংরক্ষণ করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি প্রথমার্ধে সঞ্চিতি বাবদ ব্যাংকটির ব্যয় কমেছে প্রায় ৮৪ শতাংশ।

এদিকে সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণ কমে আসায় যমুনা ব্যাংকের নিট মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ঋণের সুদহারসহ আমদানি-রপ্তানি ও কমিশন আয় কমে যাওয়ার পরও ব্যাংকটির নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।

সরকারের পরামর্শে গত ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ব্যতীত সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে আমানতের সুদহার কাক্সিক্ষত হারে না কমায় ব্যাংকগুলোর সুদ আয় কমে যায়। চলতি প্রথমার্ধে যমুনা ব্যাংকের সুদ আয় দাঁড়িয়েছে ৮১৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ কম। আমানতের সুদ পরিশোধের পর চলতি প্রথমার্ধে যমুনা ব্যাংকের নিট সুদ আয় দাঁড়িয়েছে ২৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৪০ কোটি টাকা।

খাতওয়ারি আয়ের চিত্রে চলতি প্রথমার্ধে সুখবর শুধু বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ে। এ সময় বিনিয়োগ আয় হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে কমিশন, এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ ও অন্যান্য আয় কমেছে। সব মিলিয়ে চলতি প্রথমার্ধে যমুনা ব্যাংকের পরিচালন আয় হয়েছে ৫৩০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫৬৫ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর যমুনা ব্যাংকের কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হচ্ছে ২৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর কর পরিশোধের পর চলতি প্রথমার্ধে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৫৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি।

দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। আর ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন দেশে সাধারণ ছুটির আড়ালে লকডাউন চলে। সাধারণ ছুটিতে জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সব ধরনের শিল্প কারখানা বন্ধ থাকে। এ সময়ে ঋণগ্রহীতাদের কিস্তি পরিশোধও বন্ধ হয়ে যায়। আর আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও খেলাপি না করতে নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। আর ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে দ্বিতীয় প্রান্তিকে যমুনা ব্যাংকের আয় কমে গেছে। তবে প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধিতে ভর করে অর্ধবার্ষিকীতে নিট মুনাফা ধরে রাখতে পেরেছে ব্যাংকটি।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার পর এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যমুনা ব্যাংকের সুদ আয় হয়েছে ৩৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ কম। আমানতের সুদ পরিশোধের পর দ্বিতীয় প্রান্তিকে নিট সুদ আয় হয় ৯৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬৫ কোটি টাকা। এ সময়ে বিনিয়োগ, কমিশন, ব্রোকারেজ ও অন্যান্য আয়ে তেমন পরিবর্তন না হলেও আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় পরিচালন আয় কমেছে ২৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ সময় পরিচালন ব্যয়, সঞ্চিতি সংরক্ষণ ও কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকায়, যা আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ৭৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।