তোফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন পর স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে। যে কারণে বাড়তে শুরু করেছে তালিকাভুক্ত সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটদর। এই সুযোগে অস্বাভাবিকহারে বাড়তে দেখা যাচ্ছে কিছু দুর্বল ও ‘জেড ক্যাটেগরির’ কোম্পানির শেয়ারদর। যার বেশিরভাগ কোম্পানিতেই কারসাজিকারীদের ইন্দন রয়েছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

রও পড়ুন…

বিএসইসির নজরদারীতে ৯ কোম্পানি, কারসাজি ও সন্দেহজনক লেনদেন! 

শেয়ারদর নিয়ে কারসাজি ও সন্দেহজনক লেনদেন এবং একাধিক শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসি। তাই এই ধরনের কোম্পানিগুলোকে নজরদারি রেখেছে তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে। কোনো ধরনের অনিয়ম শনাক্ত হলেই যে কোনো সময় এসব কোম্পানির বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে সংস্থাটি।

রও পড়ুন…

বিশ্লেষকরা বলছেন, মাঝে মাঝে নয়, সবসময়ই কঠোর নজর থাকতে হবে কমিশনের। নির্ভর যোগ্য সূত্র জানায়, সম্প্রতি কিছু কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। কোম্পানির আর্থিক অবস্থার বিবেচনায় কিংবা শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদানের হার কোনো বিষয়ের সঙ্গেই এভাবে দরবৃদ্ধির মিল নেই। এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। কোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য ছাড়া যেভাবে এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে তা সন্দেহজনক।

তাছাড়া ঊর্ধ্বমুখী বাজারে আগেও কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। সেই কারণে এসব কোম্পানিকে নজরদারিতে রাখা হযেছে। কারা এসব শেয়ার কেনাবেচা করছেন এবং কোন হাউস থেকে এসব লেনদেন হচ্ছে তার সবকিছুতে নজর রাখা হয়েছে। কারসাজি শনাক্ত হলে যে কোনো সময় এর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং যে হাউস থেকে অস্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

বিএসইসি নজরদারীতে রয়েছে: ঝিলবাংলা সুগার, শ্যামপুর সুগার, জিকিউ বলপেন, ইমাম বাটন, সাভার রিফেক্টরিজ, মেঘনা পেট, মেঘনা কনডেন্সমিল্ক, বিডি ওয়েলডিং, শাইনপুকুর সিরামিকস।

সাম্প্রতিক বাজার চিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, ৪৪ কার্যদিবসের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত ‘জেড ক্যাটেগরির’ কোম্পানি জিলবাংলা সুগারের শেয়ারদর বেড়েছে ৪৫০ শতাংশ। ৪৪ কার্যদিবসের মধ্যে এই শেয়ার ৩১ টাকা থেকে বেড়ে ১৮৫ টাকা লেনদেন হচ্ছে।

খোদ কোম্পানির কর্তৃপক্ষও এভাবে দরবৃদ্ধির কারণ বলতে পারছেন না। তবে গুজব রয়েছে এই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে এবং এতে কোম্পানির লোকও জড়িত রয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই এই শেয়ারের দর বৃদ্ধি নিয়ে সবারই সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

এদিকে একই সময়ে তালিকাভুক্ত জিকিউ বলপেনের শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে ১৬০ শতাংশ। ৪৪ কার্যদিবস আগে এই শেয়ার লেনদেন হয় ৬৬ টাকায়। এরপর কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকহারে বাড়তে থাকে এই কোম্পানির শেয়ারদর। সর্বশেষ গতকাল এই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হতে দেখা যায় ১৮১ টাকা ২০ পয়সায়।

‘এ ক্যাটেগরি’তে থাকলেও এই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। সবশেষ আর্থিক বছরে এই প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোকসান করে। বিগত তিন বছর ধরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ ক্যাটেগরি’ ধরে রেখেছে কোম্পানিটি।

অন্যদিকে একই সময়ের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত শ্যামপুর সুগারের শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে ১৭৫ শতাংশ। এই সময়ের মধ্যে দুর্বল এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ২৪ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে। অথচ এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি কিছু কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধি আমাদের নজরে এসেছে। এখানে জিলবাংলা সুগার, শ্যামপুর সুগারসহ আরও কিছু কোম্পানি রয়েছে। এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে কি না সে জন্য এসব কোম্পানিকে নজরদারিতে রেখেছি আমরা।

একই বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিনিয়োগকারীরা যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেই জন্য আমরা পুঁজিবাজারের প্রতিটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কোথাও কোনো ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেলে নিয়মানুযায়ী তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।