তোফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর সংস্কারে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের খোঁজে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

রও পড়ুন…

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে আইসিবির বর্তমান ও ঐতিহাসিক আর্থিক এবং অ-আর্থিক পারফরম্যান্স, সার্বিক কার্যক্রম, শেয়ারবাজার উন্নয়নে আইসিবির ভূমিকার পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবি যথাযথভাবে তার দায়দায়িত্ব পালন করছে কিনা সেটি পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।

রও পড়ুন…

বিএসইসির নজরদারীতে ৯ কোম্পানি, কারসাজি ও সন্দেহজনক লেনদেন! 

এছাড়া আইসিবির প্রকৃত ব্যবসায়িক সুযোগ খুঁজে বের করা, বিনিয়োগ কৌশল, পোর্টফোলিওর ঝুঁকি বিশ্লেষণ, পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণ, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, তহবিলের উৎস ও ব্যবহার এবং আইসিবি ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি পর্যালোচনা করবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।

গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আয়োজিত ‘শেয়ারবাজারে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও পুণ:রুদ্ধারের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছিলেন, আইসিবি সমস্যার মধ্যে আছে, সে ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে।

আমরা আগামি সপ্তাহে একটি টেন্ডারে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে আইসিবিকে পূণ:গঠনের প্রস্তাবনা তৈরী করা হবে। এ বিষয়ে আগামি নভেম্বরের মধ্যেই প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে। শেয়ারবাজারে আইসিবির সঠিক ভূমিকা পালনের জন্য প্রয়োজনে সরকার অর্থায়ন করবে।

বিএসইসির দেয়া বিজ্ঞতিতে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে, ঋণ নীতিমালা ও প্রক্রিয়া এবং ঋণ আদায় কার্যক্রমও পর্যালোচনা করবে তারা। সিকিউরিটিজ এবং অন্যান্য আইন ও বিধিবিধান পরিপালন করছে কিনা এবং এক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিচ্যুতি রয়েছে কিনা সেটিও পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। আইসিবি সম্পর্কে শেয়ারবাজারের স্টেকহোল্ডারদের আবেগ ও প্রত্যাশা এবং প্রতিষ্ঠানটি তা পূরণ করতে পারছে কিনা, সেটি মূল্যায়ন করতে হবে।

এছাড়া আইসিবির আর্থিক ও অ-আর্থিক সম্পদ পর্যালোচনা করা এবং এসব সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার হয়েছে কিনা, সেটি পরীক্ষা করে দেখার পাশাপাশি এর যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে সুপারিশ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক সুশাসন, প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি কাঠামো, জনবল এবং আইসিবি ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষতার বিষয়টি পর্যালোচনার পাশাপাশি এসব বিষয়ে কীভাবে উন্নতি করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শককে সুপারিশ করতে হবে।

এ বিষয়ে আরও বলা হয়েছে, আইসিবিকে তদারকির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির ভূমিকা পর্যালোচনার পাশাপাশি বিদ্যমান অচলাবস্থা থেকে আইসিবিকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সেটি খুঁজে দেখবে পরামর্শক। আইসিবি ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারাবাহিক দুরবস্থার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি উত্তরণের উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দেবে।

‘আইসিবির পারফরম্যান্স উন্নতির জন্য করণীয় এবং দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজারকে সহায়তাসহ মার্কেট মেকার হিসেবে এর ভূমিকার বিষয়ে সুপারিশ করবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। সর্বোপরি আইসিবিকে পুনর্গঠনের বিষয়ে সুপারিশের পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত বিএসইসির কমিটির নির্দেশনা অনুসারে অন্য যেকোনো ইস্যুতে কাজ করবে পরামর্শক কমিটি।’

বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের শেয়ারবাজারকে সহায়তা করাই ছিল আইসিবি গঠনের উদ্দেশ্য। কিন্তু কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিক লোকসান দিয়েছে এবং মূলধন হারিয়েছে।

‘উৎপাদন খাত ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণের অর্থ আদায় করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়েছে। যদিও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়াটা কোনোভাবেই পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’

বিএসইসি বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই আইসিবি যেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে সেগুলোর পর্ষদে পরিচালক হিসেবে রয়েছে এবং লক-ইন থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সেসব কোম্পানির শেয়ারও বিক্রি করতে পারছে না। এতে আইসিবির পোর্টফোলিওর মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। আইসিবিকে মূলধন সহায়তা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ভর্তুকি দেয়া হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

বিএসইসির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, আইসিবিকে ভর্তুকি দেয়া সঠিক হবে কিনা, এ মুহূর্তে সরকারকে এটি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। আর আইসিবির সার্বিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ, এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ম্যান্ডেট অনুসারে যেসব কাজ করেছে সেগুলোর তালিকা তৈরি, বর্তমানে শেয়ারবাজারে আইসিবির ভূমিকা, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ও অ-আর্থিক সম্পদের অবস্থা, এর সুশাসন, প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি কাঠামো, জনবল সক্ষমতার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায়োগিকতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সরকারের পক্ষে আইসিবিকে মূল্যায়ন করা সম্ভব।