দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১৬ সালে বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় জিপিএইচ ইস্পাত। এশিয়ায় প্রথম কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস (ইএএফ) প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধমে কোম্পানিটির উৎপাদন পাঁচগুণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় সম্প্রসারিত প্রকল্পের মাধ্যমে। চার বছর পর এখন পরীক্ষামূলক উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। মূলত পরীক্ষামূলক উৎপাদনের মাধ্যমে বাজারে বিক্রিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করছে জিপিএইচ। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জিপিএইচ ইস্পাতের নির্বাহী পরিচালক (ফাইন্যান্স) কামরুল ইসলাম জানান, সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। চলতি বছরের জুনে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে প্রকল্পের বিদেশি পরামর্শকরা গত মার্চে চলে যাওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদন কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। তবে এখন অনলাইনে বিদেশিদের পরামর্শ নিয়ে স্থানীয় প্রকৌশলীদের সহায়তায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এটি মূলত মার্কেটেবল উৎপাদন এবং আমরা ৭ সেপ্টেম্বর থেকেই উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি আরও জানান, বিশ^ব্যাপী প্রচলিত নিয়মানুযায়ী, যে প্রতিষ্ঠান যন্ত্রপাতি স্থাপন করে তারাই বাণিজ্যিক চালুর ঘোষণা দেয়। কিন্তু করোনার কারণে বিদেশি প্রকৌশলীরা আসতে না পারায় এ কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা আসার চেষ্টা করছেন। আমরা আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারব। বর্তমানে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সম্প্রসারিত প্রকল্পের ৬০ শতাংশ সক্ষমতা ব্যবহার করা হচ্ছে।

জানা গেছে, নতুন কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হলে জিপিএইচ ইস্পাতের এস এম বিলেট উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় ৬ গুণে উন্নীত হবে। কোম্পানির আগের কারখানাতে বার্ষিক বিলেট উৎপাদন ক্ষমতা ১ লাখ ৬৮ হাজার টন। সম্প্রসারিত নতুন কারখানায় উৎপাদন হবে ৮ লাখ ৪০ হাজার টন বিলেট। সব মিলিয়ে বিলেট উৎপাদনের ক্ষমতা বেড়ে হবে ১০ লাখ ৮ হাজার টন। অন্যদিকে এমএস রড ও মিডিয়াম সেকশনের উৎপাদন ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড চট্টগ্রামের কুমিরায় বিদ্যমান কারখানার পাশে বিশ্বের সর্বাধুনিক ইএএফ কোয়ান্টাম প্রযুক্তির নতুন কারখানা স্থাপন করেছে। ইউরোপের প্রাইমেটাল টেকনোলজিস লিমিটেড এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। প্রাইমেটাল হচ্ছে জাপানের মিৎসুবিশি ও জার্মানির সিমেন্সের যৌথ উদ্যোগের একটি কোম্পানি।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারখানার কোল্ড কমিশনিং চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। প্ল্যান্ট সরবরাহকারী প্রাইমেটাল টেকনোলজিসের শিডিউল অনুসারে গত ৩০ জুন হট কমিশনিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে বিদেশি প্রকৌশলীরা আসতে না পারায় সেটি বিলম্বিত হয়।

বিদেশি প্রকৌশলীদের বাংলাদেশে আসা সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্থানীয় প্রকৌশলীরা প্ল্যান্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে ডিজিটাল যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেরাই পরীক্ষামূলকভাবে হট কমিশনিংয়ের কাজ শুরু করেছেন। জিপিএইচ ইস্পাতের পরিচালনা পর্ষদ বিদেশি প্রকৌশলীরা না আসা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া এবং উৎপাদিত পণ্য ৭ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশ্বে দ্বিতীয় প্রকল্প হিসেবে জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানায় ইএএফ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রসারিত এই প্রকল্পে শুরুতে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ কারখানাটি বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গেলে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ মিলিয়ে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে।

জিপিএইচ ইস্পাতের সম্প্রসারিত প্রকল্প ব্যয়ের ৩০ ভাগ রাইট শেয়ার ইস্যু ও কোম্পানির রিজার্ভ থেকে জোগান দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশের জোগান দিয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। নতুন কারখানায় ৫০০ ডব্লিউ টিমটিবার ও বিভিন্ন গ্রেডের রডের পাশাপাশি সেকশন, অ্যাঙ্গেল, চ্যানেল, এইচ বিম, আই বিমসহ নানা ধরনের পণ্য উৎপাদিত হবে। উৎপাদিত হবে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং নির্মাণের নানা উপকরণ।

জানা গেছে, সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তিতে ফার্নেস বা লোহা গলানোর চুল্লি থেকে নির্গত তাপকে ধারণ করে তা অন্য ইউনিটে ব্যবহার করা হয়। এ কারণে কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তিতে নির্মিত ইস্পাত কারখানায় জ্বালানির সাশ্রয় হয়। কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিশুদ্ধ ই¯