দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে স্থায়ী স্থিতিশীলতা স্বার্থে জরুরী ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পূঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। আজ রবিবার বিএসইসি সহ বাজার সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে সংগঠনটি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে শুরু ২০২০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পূঁজিবাজারে যে মহাধ্বস নেমে এসেছিল সেই ধ্বসের কারণে বহু বিনিয়োগকারী পূঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে এবং অনেকে আত্মহত্যা করেছে। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যোগ্য নেতৃত্বের কারণে পূঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছে কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা ও পূঁজিবাজারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পূঁজি ফিরে পেতে শুরু করেছে। পূঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। পূঁজিবাজারে স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিম্নে লিখিত দাবীসমূহ পেশ করছি।

১. পূঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে অতিদ্রুত “বাইব্যাক আইন” পাস করতে হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদকে ইস্যু মূল্যে অথবা ঘঅঠ এর ৫% কম এই ২টির মধ্যে যেটি বেশি হবে সেই মূল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে।

২. প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদেয় ঐতিহাসিক যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাজারের পতন রোধকল্পে ‘ফ্লোর প্রাইজ’ পদ্ধতি বহাল রাখতে হবে এবং দশ টাকার নিচে বা ফেস ভ্যালুর নিচের প্রত্যেকটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ভ্যালু ন্যূনতম দশ টাকায় নির্ধারণ করতে হবে।

৩. মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত কোম্পানী আইনের ২ঈঈ ধারা মোতাবেক শেয়ার বাজারের লিস্টেড প্রতিটি কোম্পানীর পরিচালকগণকে সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০% শেয়ার ধারণ করতে হবে এবং এককভাবে পরিচালকগণকে ২% শেয়ার ধারণ করতে হবে। যদি কোন কোম্পানী ও পরিচালকগণ উক্ত পরিমাণ শেয়ার ধারণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. স্বল্পমূলধনী ও দুর্বল কোম্পানীকে ওচঙ অনুমোদন দেওয়া যাবে না। ঐ সমস্ত কোম্পানী পূঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে তাদের পরিশোধিত মূলধন কম পক্ষে ২শ কোটি টাকা হতে হবে।

৫. রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ রাখতে হবে। তবে যেসকল কোম্পানী পরপর কমপক্ষে ০৭ বৎসর ১০% হারে ক্যাশ ডিবিডেন্ট দিয়েছে/দিবে তাদের ক্ষেত্রে রাইট শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে।

৬. প্লেসমেন্ট শেয়ারের টাকা কোম্পানীগুলোর পরিশোধিত মূলধন হিসাবে দেখানো যাবে না। কোম্পানীগুলোর প্রতারণার অন্যতম কারণ হলো অবৈধ প্লেসমেন্ট বাণিজ্য।

৭. বাজারের তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করার জন্য বিদ্যমান মার্জিন লোন প্রদানের হার ১ : ০.৫% থেকে বৃদ্ধি করে ন্যূনতম ১:১.৫ করার দাবি করছি (অর্থাৎ বর্তমানে ১ টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা পর্যন্ত লোন সুবিধা বিদ্যমান কিন্তু তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য এটিকে ১ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে ১ টাকা ৫০ পয়সা/দেড় টাকা পর্যন্ত লোন সুবিধা প্রদান করতে হবে)। মার্জিন লোনের সুদ বার্ষিক শতকরা ১০ টাকা করতে হবে।

৮. সরকার ঘোষিত সকল ব্যাংকগুলোকে শেয়ার বাজারে দুইশো (২০০) কোটি টাকা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধি করে ন্যূনতম পাঁচশো (৫০০) কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নীত করতে হবে এবং বাজারের আস্থা সৃষ্টি ও তারল্য সংকট দ্রুত দূর করার জন্য উক্ত বিনিয়োগ সমূহ বাধ্যতামূলকভাবে সর্বোচ্চ আগামী ডিসেম্বর ২০২০ইং এর মধ্যে বিনিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে।

৯. সকল ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ইস্যু ম্যানেজারদেরকে শুধুমাত্র শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের শর্তে প্রচলিত এফডিআর এর ন্যায় স্বল্প সুদে এফডিআর, এসটিআর, এলটিআর অথবা নিজস্ব মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের অনুমতি প্রদান করতে হবে।

১০. আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, শেয়ার বাজার এবং ব্যাংকের মানদন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে এদেশীয় সরকারি-বেসরকারি খাতকে আরও অধিকতর শক্তিশালী ও গতিশীল করার জন্য বাস্তবতার আলোকে সময় উপযোগী ব্যাংক ঋণের বিকল্প হিসেবে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট সৃষ্টি করতে হবে। যাতে ব্যাংক গুলো দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ দিতে গিয়ে খেলাপি না হয়ে যায়, আবার ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম সময়ে বিভিন্ন কোম্পানি ও উদ্যোক্তারা যাতে বন্ড মার্কেট থেকে টাকা তুলে দেশীয় উন্নতি, কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি পাত করতে হবে।

১১. যেসকল অডিটর, ইস্যু ম্যানেজার, আন্ডার রাইটার, এ্যাসেট ভ্যালুয়েশন কোম্পানী, স্পন্সশর মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদেরকে বিভ্রান্ত করে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ লুটপাট করেছে তাদেরকে ৩ (তিন) বৎসরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

১২. ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট অতি দ্রুত চালু করতে হবে, ওটিসি মার্কেট বন্ধ করে সেখানকার কোম্পানী সমূহকে প্রয়োজনে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও মূল বাজারে ফিরিয়ে আনতে হবে বা তাদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি বিক্রি করে শেয়ারের সংখ্যা অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হবে, পাশাপাশি জেড ক্যাটাগরি পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে।

১৩. বাজারে বর্তমানে লিস্টেড সাইত্রিশ (৩৭) টি মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। কারণ প্রচার আছে যে, মিউচুয়াল ফান্ড গুলো বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে সেই টাকা শেয়ার বাজারে যথাযথ সময়ে, যথাযথভাবে বিনিয়োগ না করে তারা নিজেদের সুবিধামতো বিভিন্ন বেনামি ব্যবসা এমনকি ব্যাংকেও এফডিআর করে বলে প্রচুর অভিযোগ আছে। তাই তাদের ফান্ড গুলোকে কঠোর তদারকির আওতায় এনে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে সমুদয় টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বাধ্য করতে হবে।

১৪. সিডিবিএল, ডিএসই, সিএসই কে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। শতভাগ ডিজিটাল, অনলাইন ও আধুনিক সেবার আওতায় তাদেরকে দ্রুত নিয়ে আসতে হবে, যাতে করে অদূর ভবিষ্যতে যে কোন দূর্যোগ/দূর্ঘটনা/প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ পূঁজিবাজার শতভাগ Confident and transparently চলমান থাকতে পারে। কোনো ভাবেই বৈশিক পূঁজিবাজার থেকে আমাদের পূঁজিবাজারকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।

১৫. পূঁজিবাজারের প্রধানতম প্রাণশক্তি সেকেন্ডারি মার্কেটকে আরও গতিশীল, প্রাণবন্ত, লাভজনক, নিরাপদ করার জন্র শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যাতে করে দূর্নীতিবাজও লুটপাট কারীরা ভবিষ্যতে পূঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে না পারে।

১৬. আন্তর্জাতিক মানদন্ড অর্জন ও বাজারের পরিধি ব্যাপকহারে বৃদ্ধির জন্য শেয়ারবাজারে আরও অধিক হারে বন্ড ইস্যু, মিউচুয়্যাল ফান্ড ইস্যু, পেনশন ফান্ডে বিনিয়োগ উৎসাহিত করন, প্রফেশনাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের অনুমতি প্রদানের দাবি করছি।