দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো দেশীয় ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের লেনদেন। প্রথম দিনের প্রথম ট্রেডেই শেয়ারের দর বেড়ে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। আইপিও লটারিতে পাওয়া ২৫২ টাকার শেয়ার প্রথম দিনে লেনদেন হয়েছে ৩৭৮ টাকায়।

রও পড়ুন…

পাঁচ ইন্সুরেন্সের কোম্পানির লেনদেনে রেকর্ড

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক বলেন, পুঁজিবাজারে ওয়ালটনের তালিকাভূক্তি একটি মাইলস্টোন। মন্দ অবস্থা থেকে ভালোর দিকে পূঁজিবাজারের ইউটার্নে ওয়ালটন দিক নির্দেশানমূলক ভূমিকা রাখবে। তার প্রত্যাশা, দেশের পূঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চেয়েও ভালো করবে ওয়ালটন।

আজ (২৩ সেপ্টেম্বর) বুধবার সকাল দশটায় দেশের পূঁজিবাজারে শুরু হয় ওয়ালটন শেয়ারের লেনদেন। তার আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ওয়ালটনের মধ্যে তালিকাভূক্তির চুক্তি হয়। যাতে স্বাক্ষর করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আশরাফুল আলম এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চিফ রেগুলেটরি অফিসার আব্দুল লতিফ।

সেসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র এমডি কাজী সানাউল হক, সিএফও আব্দুল মতিন পাটোয়ারি, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম নূরুল আলম রেজভী, পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ, সিএফও আবুল বাশার হাওলাদার, ডিএমডি নজরুল ইসলাম সরকার ও ইভা রিজওয়ানা, নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবীর, উদয় হাকিম, কোম্পানি সচিব পার্থ প্রতীম দাশ, ট্রিপল এ’র চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ, এমডি ওবায়দুর রহমান, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট এর সিএফও খন্দকার রায়হান, স্যাটকম এর ভাইস চেয়ারম্যান স্বদেশ রঞ্জন সাহা প্রমূখ।

লেনদেনের প্রথম প্রহরে বড় কেক কাটা হয়। অতিথিরা ঘন্টা বাজিয়ে ওয়ালটন শেয়ার লেনদেন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।  পূঁজিবাজারের সার্কিট ব্রেকার আইন অনুযায়ী কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনে ৫০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারবে না। তৃতীয় দিন থেকে ১০ শতাংশের বেশি বাড়তে বা কমতে পারবে না। লেনদের শুরু হওয়ার মূহুর্তে ওয়ালটনের শেয়ারের জন্য ব্যাপকহারে বাই অর্ডার আসতে থাকে। সর্বোচ্চ প্রান্তসীমা ৩৭৮ টাকায় শেয়ার লেনদেন হয়।

একইভাবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ঢাকা অফিসেও আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ালটন শেয়ার বেচাকেনা শুরু হয়েছে। সেখানেও কেক কেটে, ঘন্টা বাজিয়ে ট্রেডিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ডিজিএম হাসনাইন বারি। সেসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিএসই’র ডেপুটি ম্যানেজার পারভিন আক্তার, রাহী ইফতেখার রেজা ও মাসুদা বেগম প্রমূখ।

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, বিশ্ব ইলেকট্রনিক্সের বাজারে সেরা গ্লোবাল ব্র্যান্ড হওয়ার টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন। এই অগ্রযাত্রায় ওয়ালটন পরিবারের সঙ্গে শামিল হয়েছেন দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা শুধু ওয়ালটনের শেয়ার হোল্ডারই নন; ভবিষ্যত কার্যক্রম এবং লক্ষ্য পূরণেরও অংশীদার হয়েছেন। তাই শেয়ার হোল্ডারদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেয়া হবে।

তিনি আশ্বস্ত করেন, ওয়ালটনের প্রতিটি হিসাবে স্বচ্ছতা রয়েছে, থাকবে।
জানা গেছে, ওয়ালটনের আইপিও আবেদন গ্রহণ করা হয় ৯ থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত ৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকার বিপরীতে ৩৭৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার আবেদন জমা পড়ে। যা ৯ দশমিক ৫৯ গুণ বেশি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লটারি হয় গত ৬ সেপ্টেম্বর।

উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭২৯তম কমিশন সভায় ওয়ালটনকে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেয়।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ওয়ালটন পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৬০ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৫ টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৯ কোটি ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৯৫ টাকা সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত টাকা থেকে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যবসা সম্প্রসারণ, ৩৩ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ ও ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিও পরিচালনা বাবদ ব্যয় করা হবে। এর আগে গত ২ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত ওয়ালটনের নিলাম (বিডিং) শেষ হয়। দেশে সর্বপ্রথম ডাচ পদ্ধতিতে বিডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৩১৫ টাকা।

আইন অনুসারে, কাট-অব প্রাইসের চেয়ে ১০ শতাংশ কমে অর্থাৎ ২৮৩ টাকা দরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির শেয়ার ইস্যু করার কথা ছিল। তবে করোনা মহামারি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে কাট-অব প্রাইসের ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ কমে অর্থাৎ ২৫২ টাকা দরে শেয়ার ইস্যু করেছে ওয়ালটন। এটিকে অনেকেই ওয়ালটনের উদারতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ওয়ালটন হাই-টেকের ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।

২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, ওয়ালটন হাই-টেকের শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য বা এনএভি ২৪৩.১৬ টাকা এবং মুনাফা বা ইপিএস ৪৫.৮৭ টাকা। আর বিগত ৫ বছরের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী কর পরবর্তী নিট মুনাফার ভারিত গড় হারে ইপিএস অর্জিত হয়েছে ২৮.৪২ টাকা।

তথ্য মতে, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ইপিএস নিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে ওয়ালটন। ওয়ালটনের মতো এতো বেশি ইপিএস নিয়ে আগে কোনও কোম্পানি আইপিওতে আসেনি। শুধু তাই নয়, ইপিএস ও এনএভি বিবেচনায় বর্তমানে শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর তালিকায়ও রয়েছে ওয়ালটন।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ অর্থবছরের প্রকাশিত এনএভি বিবেচনায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওয়ালটন। আর তালিকাভুক্ত দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়ালটনের এনএভি শীর্ষ ৫ এ। এদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ইপিএস বিবেচনায় ওয়ালটন অষ্টম স্থানে রয়েছে। এমনকি তালিকাভুক্ত খ্যাতনামা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চেয়েও ওয়ালটনের ইপিএস বেশি।