দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে নিজেদের আরও দুটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করবে ইলেকট্রনিকস খাতের দেশি জায়ান্ট ওয়ালটন গ্রুপ। কোম্পানি দুটি হচ্ছে ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ওয়ালটন প্লাজা। গত মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে এক বৈঠকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের নতুন করে আরও ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার না ছাড়ার শর্তে এ দুই কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে সম্মত হয়েছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।

রও পড়ুন..

সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকরা ডিভিডেন্ড প্রতারণায় ফেঁসে যাচ্ছে!

এর ফলে নতুন করে আর শেয়ার ছাড়তে হবে না ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে। বিএসইসির সঙ্গে ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক বৈঠকে এমন সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম। অবশ্য এই ছাড়ের বিপরীতে ওয়ালটন গ্রুপ আরও দুটি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে সম্মত হয়েছে, যেখানে ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার পর্যাপ্ত থাকবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড মূলত ল্যাপটপ ও মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন করে থাকে। অপর কোম্পানি ওয়ালটন প্লাজার অধীন সারা দেশে ৩৭২টি শোরুম রয়েছে। ওয়ালটন প্লাজার মাধ্যমে ওয়ালটন গ্রুপভুক্ত কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য সারা দেশে বিক্রি হয়। অবশ্য ওয়ালটন প্লাজা ছাড়াও ওয়ালটন হাইটেকের পণ্যগুলো অন্যান্য ডিলারের মাধ্যমেও বিক্রি হয়।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে মাত্র ১ শতাংশেরও কম শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতেই উচ্চ আয়ের কোম্পানিটির শেয়ারের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ফলস্বরূপ অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে ওয়ালটনের শেয়ার দর। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হলে কোম্পানিটির ওপর ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়ানোর চাপ তৈরি হয়। তবে সেকেন্ডারি মার্কেটের বিনিয়োগকারীদের লোকসানের বিষয়টি বিবেচনা করে ওয়ালটনের নতুন শেয়ার ইস্যুর প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে এসইসি।

গত মঙ্গলবার ওয়ালটনের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে আরও শেয়ার ইস্যুর বিষয়টিতে ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে বিএসইসি। উদয় হাকিম বলেন, ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম মঙ্গলবার কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিল। সেখানে এসইসির পক্ষ থেকে ওয়ালটনের ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখন নতুন করে শেয়ার ইস্যু করলে দর আরও কমে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যেটা আমরা চাই না। বিষয়টিতে কমিশনও একমত পোষণ করে জানায় যে, তারাও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হোক সেটা চায় না। তবে এর বিপরীতে এসইসির পক্ষ থেকে ওয়ালটন গ্রুপের আরও দুটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয় জানিয়ে উদয় হাকিম বলেন, ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ কমিশনের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ওয়ালটন গ্রুপের ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ওয়ালটন প্লাজার পর্যাপ্ত ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ওয়ালটন। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানিটির শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সর্বনিম্ন ৩১৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৬৫ টাকা দর প্রস্তাব করে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নির্দেশক মূল্য (কাট-অব-প্রাইস) ৩১৫ টাকার ওপর ২০ শতাংশ ছাড়ে ২৫২ টাকা দরে লটারিতে বরাদ্দ পান। এর ফলে ১০০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করতে গিয়ে মাত্র ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি শেয়ার ইস্যু করতে হয়েছে, যা কোম্পানির মোট শেয়ারের মাত্র শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ।

স্বল্পসংখ্যক ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার থাকায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর লেনদেন শুরুর প্রথম সাত কার্যদিবসে ওয়ালটনের শেয়ারের সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধির পরও সেকেন্ডারি বাজারের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে পারেননি। মাত্র সাত দিনেই শেয়ার দর তিন গুণ বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সমালোচনা তৈরি হলে ওয়ালটনসহ যেসব কোম্পানির ১০ শতাংশের কম ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার রয়েছে, সেসব কোম্পানির ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়াতে এসইসির ওপর চাপ তৈরি হয়।

বিএসইসিও উদ্যোগ নেয়, যদিও তা একেবারেই প্রাইমারি স্টেজে রয়ে যায়। তবে এসইসির উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি পুঁজিবাজারে ছড়িয়ে পড়লে ওয়ালটনের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। টানা নয় কার্যদিবস সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধির পর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওয়ালটনের শেয়ার কেনার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে দরে উল্টো চিত্র দেখা যায়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওয়ালটনের শেয়ার মূলত ৯৪০ থেকে ১০০৯ টাকায় কেনার সুযোগ পান। এ সময়ে প্রায় ১৭ লাখ শেয়ার কেনেন তারা।

তবে ওয়ালটনের ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়াতে বিএসইসির পদক্ষেপের বিষয়টি বাজারে ছড়িয়ে পড়লে চার কার্যদিবসে প্রায় ২৪ শতাংশ দর হারিয়ে ৭৬৭ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে আসে। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করে কমিশন ওয়ালটনের ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়ানোর প্রক্রিয়া থেকে সরে আসায় গতকাল শেয়ারটির দর আবারও বাড়তে দেখা গেছে।