দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও নামমাত্র ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েছে, তাদের কাছে যৌক্তিক ব্যাখ্যা চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে যে ভিত্তিতে কোম্পানিগুলো নামমাত্র ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, তার ব্যাখ্যাও জানাতে চেয়েছে কমিশন। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, ৩০ জুন. ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছেরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নামমাত্র ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা এমন অন্তত ২০টি কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

সূত্রমতে, যেসব কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে মাত্র ২টি কোম্পানি ক্যাশ ডিভিডেন্ড না দিয়ে স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। বাকি ১৮টি কোম্পানির মধ্যে কোনোটি শুধুমাত্র ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েছে। আবার কোনোটি ক্যাশ ও স্টক উভয় ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ক্যাশ ডিভিডেন্ড না দেওয়া এবং নামমাত্র ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা দেওয়ার কারণে কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে সূত্র উল্লেখ করে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানিগুলোকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) অনুযায়ী ডিভিডেন্ড কম দেওয়ার যৌক্তিক কারণ ও ভিত্তি ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এর আগে গত ১ নভেম্বর ডিভিডেন্ড দেওয়ার প্রতারণার অভিযোগে ৮টি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

সংগঠনটির অভিযোগ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্বনামধন্য বেশকিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশপাশি পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা করছে না। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। এতে বিনিয়োগকারীরা কাঙ্ক্ষিত ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং রিজার্ভ অর্থ লুটপাটের পাঁয়তারা করছে কোম্পানিগুলো।

তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছেরে আনলিমা ইয়ার্ন ডাইং ১৪ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ১১.৩৩ টাকা ইপিএস’র বিপরীতে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, বিএসএফ থ্রেড ডাইং ১.৪৯ টাকা ইপিএস’র বিপরীতে ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, বাংলাদেশ ১.৩৫ টাকা লোকসান ইপিএস’র বিপরীতে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, আজিজ পাইপস ২৬ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, বিডি অটোকার্স ৩৪ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড,

বেক্সিমকো ৫১ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ফাইন ফুডস ১৯ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ফু-ওয়াং সিরামিকস ৪৭ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ১.৪০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৩ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

এছাড়া এনভয় টেক্সটাইলস ১.৬৩ টাকা ইপিএস’র বিপরীতে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ইভাইন্স টেক্সটাইল ২০ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৫পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ২.৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, দেশ গার্মেন্টস ৪৩ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ৩ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড, দেশবন্ধু পলিমার ১০ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড,

বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস ১.৬৫ টাকা ইপিএস’র বিপরীতে ৬ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, বিডি থাই এ্যালুমিনিয়াম ২১ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, বিডি ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোড ৮ পয়সা লোকসান ইপিএস’র বিপরীতে ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ফার কেমিক্যালের ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৩ পয়সা ইপিএস’র বিপরীতে ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড এবং ফু-ওয়াং ফুডস ৫৫ টাকা ইপিএস’র বিপরীতে ১.৬৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

এদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নামমাত্র ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতেই বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করায় বিমা খাতে তালিকাভুক্ত এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদকে বিএসইসিতে তলব করা হয়।  এছাড়া রিজার্ভ ভালো থাকা সত্ত্বেও কম ডিভিডেন্ড দেওয়ায় এনভয় টেক্সটাইলকে ডিভিডেন্ড বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি। এরই ধরাবাহিকতায় সম্প্রতি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স অন্তবর্তীকালীন ডিভিডেন্ড করেছে। আর এনভয় টেক্সটাইলও অন্তবর্তীকালীন ডিভিডেন্ড দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছে।