দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মানুষের হাতে টাকা রাখার জন্য ভালো বিকল্প নেই। নিশ্চিত মুনাফা ও নিরাপদে টাকা ফেরতের আশায় মানুষ ব্যাংকে টাকা আমানত রাখছে। এরফলে ব্যাংক খাতে বাড়ছে অতিরিক্ত তারল্য। ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে চাহিদামতো সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ড, কল মানি ও অন্য ব্যাংকে আমানত হিসেবেও রাখতে পারছে না। এতে জমা টাকা নিয়ে সমস্যায় পড়ে গেছে কিছু ব্যাংক।

জানা যায়, গত আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর হাতে নগদ আছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা বিনিয়োগ করেছে ট্রেজারি বিল-বন্ড ও বৈদেশিক মুদ্রায়।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার মধ্যেও ভালো আমানত ও নগদ জমার হার (সিআরআর) কমানোয় ব্যাংকগুলোর হাতে তারল্য বেড়েছে। এর বিপরীতে কমে গেছে ব্যক্তি খাতের ঋণ, সরকারও ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। কমে গেছে ট্রেজারি বিল-বন্ডের বিপরীতে আয়ের পরিমাণ। আবার বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণ দিতেও সতর্ক হয়ে গেছে কিছু ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোতে গত ফেব্রুয়ারিতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে ব্যাংকগুলো থেকে আমানত উত্তোলনের চাপ বেড়ে গেলে মার্চ শেষ অতিরিক্ত তারল্য কমে হয় ৮৯ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে গত ফেব্রুয়ারিতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে ব্যাংকগুলো থেকে আমানত উত্তোলনের চাপ বেড়ে গেলে মার্চ শেষ অতিরিক্ত তারল্য কমে হয় ৮৯ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ১ এপ্রিল থেকে কমানো হয় ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার (সিআরআর)। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা ফেরত পায় ব্যাংকগুলো। এতে এপ্রিল শেষে অতিরিক্ত তারল্য বেড়ে হয় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।

গত জুলাইয়ে যা আরও বেড়ে হয় ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা ও আগস্টে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এদিকে গত জুলাই থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬০ কোটি ডলার ক্রয় করে। প্রবাসী আয়ের কারণে ব্যাংকগুলোর ডলার ধারণের সীমা অতিক্রম করায় ডলার কিনে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদে ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা জমা হয়।

জানা গেছে, গত জুলাইয়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমানতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, এবং ঋণে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ। ওই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। ভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে কম সুদের প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে ঋণ বাড়তে শুরু করেছে।

এরপরও অতিরিক্ত তারল্য নিয়ে বিপাকে আছে কিছু ব্যাংক। গত আগস্ট শেষে সোনালী ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য ৩৫ হাজার ২২ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ১১ হাজার ২২৮ কোটি ও ইসলামী ব্যাংকের ৯ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। তবে তারল্য নিয়ে সব ব্যাংকের পরিস্থিতি এক না। অনেক ব্যাংক টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। গ্রাহক থেকে আমানত না পেয়ে বেশি সুদে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিচ্ছে।