দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বুক বিল্ডিং পদ্ধতি বাতিল করে ফিক্সড প্রাইজ পদ্ধতিতে আই‌পিও চায় বিনিয়োগকারীরা। আজ ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ.কে. এম. মিজান-উর রশিদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি বিএসইসিতে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১০ইং থেকে পুঁজিবাজারে যে মহাধ্বস শুরু হয়েছিল তা ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। আপনার কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও আপনার কমিশনের সঠিক নেতৃত্বে পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। আমরা আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছি।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, পূর্বের কমিশনের মেয়াদ কালে (২০১১-২০২০ইং) সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে, অনেকে আত্মহত্যা করছে। অনেকে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। পুঁজিবাজারের এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য পূর্বের কমিশনের অতিরিক্ত প্রিমিয়াম সহ ইস্যুকৃত শেয়ার ও দুর্বল কোম্পানীগুলোর আই‌পিও অনুমোদনই সবচেয়ে বেশী দায়ী।

অতিরিক্ত প্রিমিয়ামসহ ইস্যুকৃত অধিকাংশ কোম্পানীর শেয়ার দ‌র তার ইস্যু মূল্যের নীচে চলে এসেছিল। কোন কোন শেয়ারের দর ১ টাকা থেকে ৩ টাকার মধ্যে অবস্থান করেছিল। আইপিও শেয়ারে বেশী প্রিমিয়াম দেওয়ার দুর্নাম থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে বি.এস.ইসি পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ প্রণয়ন ও সংশোধন করে। এই প্রক্রিয়ায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে একমি ল্যাবরেটরিজ, আমরা নেটওয়ার্কস, আমান কটন, বসুন্ধরা পেপার মিলস, এস্কয়ার নিট কম্পোজিট, রানার অটো-মোবাইলস, এডিএন টেলিকম কোম্পানীগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ কোম্পানিটি তালিকাভূক্ত হয়েছে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কাট অফ প্রাইজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিডিং প্রক্রিয়ায় প্রতিটি কোম্পানীতে ইতিপূর্বে যথেষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এখানে ইস্যু ম্যানেজারগণ মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। প্রতিটি কোম্পানীর বিডিং প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ইস্যু ম্যানেজারের সহায়তায় কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ ও কতিপয় দূর্নীতিবাজ ইলিজেব্যল ইনভেস্টররা পরস্পরের যোগসাজসের মাধ্যমে শেয়ারের উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করেছে। বিএসইসি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সংশোধনী আনলেও এই অনিয়ম ও দূর্নীতি রোধ করতে পারেনি। শেয়ার দর অতিমূল্যায়িত হওয়ায় কোম্পানীগুলো লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিশ্ব হয়েছে লক্ষ লক্ষ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে বাজারে অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলোর কাট অফ প্রাইজ ও শেয়ারের সর্ব নিম্ন বাজার মূল্য নিচে তুলে ধরা হলো:

১. একমি ল্যাবরেটরিজ ৮৫ টাকা ৫৪.২০ টাকা

২. আমরা নেটওয়ার্কস ৩৯ টাকা ২৮.৩০ টাকা

৩. আমান কটন ফাইবার লি: ৪০ টাকা ১৬.০০ টাকা

৪. বসুন্ধরা পেপার ৮০ টাকা ৩৫.০০ টাকা

৫ এস্কয়ার নিট কম্পোজিট ৪৫ টাকা ১৮.৩০ টাকা

৬ রানার অটোমোবাইলস ৭৫ টাকা ৩৯.০০ টাকা

৭ এডিএন টেলিকম ৩০ টাকা ২৬.৮০ টাকা

এই কোম্পানীগুলোর মধ্যে আমরা নেটওয়ার্কস, আমান কটন, বসুন্ধরা পেপার, এস্কয়ার নিটকম্পোজিট এবং রানার অটোমোবাইলস কোম্পানীগুলোর বিডিং প্রক্রিয়ায় পরস্পর যোগ-সাজস, কারসাজি, দূর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বিডিং বাতিলের জন্য পূর্বের বিএসইসি এর চেয়ারম্যান বরাবর বিনিয়োগকারীরা দরখাস্ত দিয়েছিল, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বরং এইসব কোম্পানীগুলোর কারণে পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরী হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

সর্বশেষ ওয়াল্টন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লি: কোম্পানীটি তালিকাভূক্ত হয়। এখানে কতিপয় দূর্নীতিবাজ যোগ্য বিনিয়োগকারীরা অনিয়ম, কারসাজি ও দূর্নীতির মাধ্যমে পরস্পরের যোগ সাজসে কোম্পানীটিকে উচ্চমূল্য পাইয়ে দিয়েছে এবং কোম্পানীটির কাট অফ প্রাইজ ৩১৫ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় যে, কোম্পানীটির সর্বোচ্চ বিডিং হয়েছিল ৭৬৫ টাকায়।

সম্প্রতি এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড, বিএনও লুবরিকেন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিডিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখানেও ইস্যু ম্যানেজার ও কোম্পানীর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় কতিপয় যোগ্য বিনিয়োগকারীরা পরস্পরের যোগসাজসে অযৌক্তিকভাবে শেয়ারের উচ্চমুল্য নির্ধারণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

যোগ্য বিনিয়োগকারীদের অযোগ্যতার কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন বিনিয়োগকারীরা। যেমন- ওয়াল্টন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ-এর সর্বোচ্চ বিডিং প্রাইজ ৭৬৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১২ টাকা, মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড-এর সর্বোচ্চ বিডিং প্রাইজ ৯৮ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৪ টাকা, ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর সর্বোচ্চ বিডিং প্রাইজ ১০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৪ টাকা। বিএনও লুব্রিকেন্ট কোম্পানী লিমিটেড এর সোর্বচ্চ বিডিং প্রাইজ ৬০ টাকা এবং সর্বনিম্ন বিডিং প্রাইজ ১৩ টাকা। এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড-এর সর্বোচ্চ বিডিং প্রাইজ ৮৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন বিডিং প্রাইজ ১৬ টাকা। এই সকল অযোগ্য বিডারদের শাস্তির আওতায় আনার দাবী করছি।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির দূর্বলতার কারণে কোম্পানী কর্তৃপক্ষ, ইস্যু ম্যানেজার ও কতিপয় দুর্নীতিবাজ যোগ্য বিনিয়োগকারীরা পরস্পর যোগ সাজসের মাধ্যমে কোম্পানীগুলোর শেয়ার দর অতি মূল্যায়িত করে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। বিএসইসি যেটা কোনভাবেই বোধ করতে পারছে না। অতএব, উপরোক্ত বিষয় সুবিবেচনায় এনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি বাতিল করে পূর্বের ন্যায় ফিক্সড প্রাইজ পদ্ধতি অনুমোদনের ব্যবস্থা করা হোক।