তৌফিক ইসলাম ও এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের খাতের কোম্পানি রিজেন্ট টেক্সটাইল ডিভিডেন্ডের নামে প্রতারণার অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। নামমাত্রা ডিভিডেন্ড দিয়ে ক্যাটাগরি ধরে রাখার অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। ‘জেড’ ক্যাটাগরির জঞ্জালে যেন না পড়তে হয় সেজন্য নামেমাত্র ডিভিডেন্ড দিয়ে ক্যাটাগরি টিকিয়ে রেখেছে কোম্পানিটি। অন্যান্য যেকোন বছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যবসায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পর্ষদ সর্বনিম্ন (৫ শতাংশের নিচে) লভ্যাংশ ঘোষণায় রেকর্ড করেছে।

রিজেন্ট টেক্সটাইল ‘নো’ ডিভিডেন্ডের লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করতে এমনটি করা হয়েছে। তবে এই রেকর্ড তৈরীতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে করোনা মহামারি। করোনা মহামারির কারনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন ২০) ব্যবসা দু-একটি খাত ছাড়া প্রায় সবই বন্ধ ছিল। যাতে ওইসময় কোম্পানিগুলো কোন ব্যবসা করতে পারেনি। তবে পরিচালন ব্যয় ঠিকই হয়েছে। এতে করে ওই অর্থবছরে কোম্পানিগুলোর স্বাভাবিক মুনাফা হয়নি। অনেক কোম্পানিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। যে কারনে লভ্যাংশেও প্রভাব পড়েছে।

এদিকে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, আমাদের টাকায় ব্যবসা করেও বছর শেষে ডিভিডেন্ড দিতে কষ্ট হচ্ছে কোম্পানির। কোম্পানিটি চাইলে আরো ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারতো। কোম্পানির রির্জাভের পাহাড় থাকলেও বিনিয়োগকারীদের কোন উপকারে আসছে না। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ রিজেন্ট টেক্সটাইলের নামমাত্রা ডিভিডেন্ডের প্রতারণার বিষয়টি বিএসইকে তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।

ভালো ব্যবসা দেখিয়ে পুঁজিবাজার থেকে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করে রিজেন্ট টেক্সটাইল। তবে এখন সেই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ২০১৫ সালে পুঁজিবাজার থেকে ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে রিজেন্ট টেক্সটাইল। গত পাঁচ বছরেও সেই অর্থ ব্যবহার করেনি কোম্পানিটি। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষে ওই টাকা তোলার কথা বলা হলেও দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে কোম্পানিটি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অর্থ ব্যবহার না করে তা ব্যাংকে ডিপোজিট করে রাখারও। পাঁচ বছরে ১২৫ কোটি টাকার ৩৬ শতাংশ এখনো ব্যবহার করেনি রিজেন্ট টেক্সটাইল।

অথচ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গত বুধবার ১৮ নভেম্বর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। আইপিওতে অর্থ তোলার সময়ের মতো এক্ষেত্রেও ব্যবসায় সম্প্রসারণের নামে বোনাস ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রিজেন্ট টেক্সটাইল আইপিওতে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা (১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ) দরে ইস্যুর মাধ্যমে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। যা ব্যবহারের জন্য ১৭ মাস বা ২০১৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত সময়সীমা ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষেও ৪৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা বা ৩৬ শতাংশ অব্যবহৃত রয়েছে। যা ব্যবহারের জন্য কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও শেষ করা যায়নি।

গত ৫ বছরে আইপিও ফান্ড ব্যবহার করতে না পারার কারণে ওই ফান্ডের ওপর এফডিআরজনিত সুদবাবদ আয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যাতে করে এখন মোট আইপিওর অব্যবহৃত ফান্ডের পরিমাণ বেড়ে দাড়িঁয়েছে ৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ১২৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের রিজেন্ট টেক্সটাইলে ১৬৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে।

কোম্পানিটির উদ্দেশ্য সৎ থাকলে এই রিজার্ভ থেকে ভালো অঙ্কের লভ্যাংশ দিতে পারত কোম্পানিটি। অথচ রিজেন্ট টেক্সটাইলের পর্ষদ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ নগদ ও সবার জন্য ১ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। যদিও ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ০.৩১ টাকা লোকসান হয়েছে। আর বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে কোম্পানিটি রিজার্ভ বাড়িয়ে যাচ্ছে। যা নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানায়, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য রিটেইন আর্নিংস থেকে বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। যা ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

ভালো ব্যবসা দেখিয়ে পুঁজিবাজার থেকে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করে রিজেন্ট টেক্সটাইল। কোম্পানিটি ইস্যুর জন্য অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখিয়েছে, অন্যথায় এখন শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারনার জন্য নামমাত্রা ডিভিডেন্ড দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যে কারনে বিভিন্ন কোম্পানির ন্যায় রিজেন্ট টেক্সটাইল আর্থিক হিসাব পূণ:নিরীক্ষার দাবি তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) রিজেন্ট টেক্সটাইল ডিভিডেন্ড প্রতারণার কথা উল্লেখ করে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন তদন্তের দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ.কে.এম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী এবং সাধারণ

সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত রিজেন্ট টেক্সটাইলের ডিভিডেন্ডের প্রতারণা, বিএসইতে চিঠি দিছে বলে জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিটির অসত্য আর্থিক প্রতিবেদন, দুর্বল করপোরেট গভর্ন্যান্স, লভ্যাংশ প্রদান না করা, রিজার্ভে টাকা রেখে লুটপাট করা, দুর্বল আইপিও অনুমোদন। এ কোম্পানির থেকে নামমাাত্রা ডিভিডেন্ড পেয়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে। পর্যপ্ত রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের আশানুরুপ লভ্যাংশ দেয়নি।

এ বিষয় পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, রিজেন্ট টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ চাইলে আরো ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারতো। কোম্পানিটি গত পাঁচ বছরে আইপিও টাকা ব্যবহার না করা প্রশ্নবিদ্ধ কাজ বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া ডিভিডেন্ডের নামে বিনিয়োগকারেীদের সাথে প্রতারনা করছে বলে তিনি মনে করেন। এ ধরনের কোম্পানির পরিচালকরা স্বচ্ছ নয়। পরিচালকদের অনৈতিক কার্যকলাপের চিত্র ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে। যার কারনে ভালো রিজার্ভ থাকা স্বত্বেও ২ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে।

এ ব্যাপারে রিজেন্ট টেক্সটাইল কোম্পানির সচিব রিয়াজুল হক সিকদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেনি।