দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল ফিড মিল লিমিটেডের ব্যবসায়িক লেনদেনে অস্বচ্ছতার প্রমাণ মিলেছে। ন্যাশনাল ইলেকট্রোড অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, কর্ণপুর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ন্যাশনাল হ্যাচারি লিমিটেড এই তিন কোম্পানিতে কোনো বিবেচনা ছাড়াই পাঁচ কোটি ৬০ লাখ ২৫ হাজার ৩৬২ টাকা দিয়েছে ন্যাশনাল ফিড মিল লিমিটেড। কোনো বিবেচনা ছাড়াই লেনদেন করার জন্য কোম্পানিটির নিরীক্ষক আপত্তি জানিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত কোম্পানির নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে।

এছাড়া ন্যাশনাল ফিড মিল লিমিটেড সম্ভাব্য অনাদায়ী অর্থের বিপরীতে যথাযথ প্রভিশন না রেখে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে কোম্পানির তৈরি আর্থিক প্রতিবেদনে সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখানো হচ্ছে, যা কিনা আন্তর্জাতিক হিসাব মানের (আইএফআরএস-৯) স্পষ্ট লঙ্ঘন। আইএফআরএস না মেনে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করাই কোম্পানির নিরীক্ষকও আপত্তি জানিয়েছে।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত অগ্রিম, জমা এবং অগ্রিম পরিশোধ হিসেবে ছয় কোটি ৯৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৪২ টাকা দেখানো হয়েছে এর মধ্যে ২২ লাখ ৫৪ হাজার ৩১০ টাকা কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন ও বিবেচনা ছাড়াই ন্যাশনাল ইলেকট্রোড অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস লিমিটেডকে দিয়েছে ন্যাশনাল ফিড মিল।

কর্ণপুর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে এক কোটি ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭৫ টাকা, এর মধ্যে ৬৮ লাখ ৯ হাজার ২৪২ টাকার বিক্রয়জনিত পাওনা আর বাকি ৬৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩৩ টাকা কোনো বিবেচনা ছাড়াই দিয়েছে ন্যাশনাল ফিড। এবং ন্যাশনাল হ্যাচারি লিমিটেডের কাছে পাঁচ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৭ টাকা, এর মধ্যে ৬৯ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৮ টাকা বিক্রয়জনিত পাওনা এবং বাকি চার কোটি ৬৯ লাখ ১৫ হাজার ৩১৯ টাকা কোনো বিবেচনা ছাড়াই দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি কোম্পানিটির প্রথম (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২০) প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আলোচিত সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৭ পয়সা, আগের বছর একই সময় ছিল ১৩ পয়সা। আর ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ১৬ পয়সা, যা ২০২০ সালের ৩০ জুন তারিখে ১২ টাকা ৭৬ পয়সা। এই প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে দুই পয়সা অথচ আগের বছর একই সময় ছিল পাঁচ পয়সা।

কোম্পানিটি ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানির ২০০ কোটি অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট আট কোটি ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৪টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের কাছে ৩০.৪০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ২৭.৫২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪২.০৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দুই শতাংশ ক্যাশ (উদ্যোক্তা ব্যতীত) ও আট শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি।

আলোচিত সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ০.১৭ টাকা। ২০২০ সালের ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১২.৭৬ টাকা। ওই সময় শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে ০.০৬ টাকা। আগামী ১৫ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।