দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রাজধানীর তেজগাঁও রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সরকারি এই কার্যালয়টি ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে এমন পরিচিতিই ছড়িয়েছে এখন সবখানে! ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু রাজধানীর তেজগাঁও রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান এর বিপরীতে। ফলে প্রকাশ্যে চলছে লাখ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন! এদিকে, রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা ছাড়াও অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছে একটি দালাল চক্র। ভুক্তভোগী অসহায় ব্যক্তিরা জমিজমা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নিয়ে এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে তারা।

দলিল করতে আসা ভুক্তভোগীরা জানান, তেজগাঁও রেজিস্ট্রিসহ তার অনুসারী এবং দালালরা নানা ধরনের জাল-জালিয়াতিতে জড়িত। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বালাম টেম্পারিং ও পাতা ছিড়ে ফেলার মতো অভিযোগ রয়েছে অফিসের রেকর্ড রক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া কর্মরতরা একজনের জমি অপরজনের কাছে বিক্রি করার জন্য ভলিয়মের পাতা ফাঁকা রেখে অপর একটি চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত জানুয়ারী মাসে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। চোরের দল ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার, উত্তরা থানা ও বাড্ডা থানা রেজিস্ট্রারের কক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি নিয়ে গেছে। এর আগেও কয়েকবার এই কার্যালয়ে চুরির ঘটনা ঘটেছে। শতাধিক বালাম বইসহ এই কার্যালয়ের রেকর্ডরুমের পিওন গ্রেফতার হলেও সে এখন আবার চাকরিতে বহাল।

রেজিস্ট্রি অফিস সূত্র জানায়, এখানে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা টাকার বিনিময়ে মানুষের দলিলাদি গায়েব করে দেয়। যার সাথে কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত রয়েছেন। এছাড়া ২০১৪ সালে এই কার্যালয়ের রেকর্ড রুম থেকে শতাধিক বালাম বই গায়েব হয়ে যায়। পরে এই ঘটনায় গ্রেফতার হয় আলী আহমেদ কেটু নামের রেকর্ড রুমের পিওন। তার বাসা থেকে গায়েব হয়ে যাওয়া বালাম বই উদ্ধার হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কেটু ঐ সময় বলেছিল, বালাম বই চুরি করে অসাধু দলিল লেখকদের হাতে তুলে দিত সে। সেই দলিল দিয়ে তৈরি হতো নতুন দলিল।

আবার জমির মূল মালিকদের বিপদের মধ্যে ফেলতে এক শ্রেণীর অসাধু লোক নকল দলিল তৈরি করে দিত। বালাম বইয়ে মূল মালিকের কোনো তথ্য না থাকায় আইন আদালতে গিয়েও তারা তেমন সহায়তা পেতেন না। কেটু পুলিশকে বলেছিল, প্রতিটি বালাম বই দুই লাখ টাকার বিনিময়ে অসাধু দলিল লেখকদের হাতে তুলে দিত সে।

প্রাপ্ত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর খিলগাঁও থানার নন্দিপাড়া মৌজার নবী হোসেন গং সিএস/এসএ দাগ নং ৭৭২ এর আর.এস রেকর্ডীয় মালিক (দে. মো: নং ১৩৭/২০১৬ এর রায়ের আলোকে) বাবু স্বপন কুমার হাওলাদারের নিকট  থেকে ৩৮.৫৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। যা তাহার নিজ নামে খারিজা, ডিসিআর, খাজনা পরিশোধ ও  দখলাধীন আছে।

এমতাবস্থায় আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আমাদের দলিল দাতার পর্ববর্তী  বায়া দলিল যার নং ৩১৪০৮ তাং ৩১-১২-১৯৭৩ ইং ভলিউম নং ৩৯৮ পৃষ্ঠা নং ২৯৫-২৯৭ সার্টিফিকেট কপি উত্তোলন করতে গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সদর রেকর্ড রুম, ঢাকা  থেকে আমাদের মৌখিকভাবে জানানো হয় যে, আমাদের দলিলের উল্লেখিত পাতাগুলো ফাঁকা।

তৎপরবর্তীতে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, একটি কুচক্রি মহল অন্য একটি ভলিউমে যার নং ৪৮৮ পৃষ্ঠা ২৯০-২৯৩। আমাদের দলিলের একই নাম্বারে ভুয়া দলিল সৃজন করে আমাদের জমি অবৈধ দখলের পাঁয়তারা করছে। এছাড়া আমাদের দায়েরকৃত দেওয়ানী মোকাদ্দমা ২৬০/১৮ এর ২২-১১-২০ তারিখের শুনানিতে ভুয়া দলিল দাখিল  করেছে।

অথচ উক্ত মামলার বাদিরা মামলা দায়ের কালে ২৬-৪-২০১৮ তারিখে আমাদের নকল তথা দলিল নং ৩১৪০৮ তারিখ ৩১-১২-১৯৭৩ ভলিউম নাম্বার ৩৯৮ পৃষ্ঠা ৯৫-৯৭সার্টিফিকেট কপি তুলে তাদের মামলায় দাখিল করেছে। আমরা আশঙ্কা করছি যে, উক্ত কুচক্রী মহল যে কোন সময় ভুয়া জাল দলিলপত্র নিয়ে আমাদের জমি দখলে অবস্থানরত ব্যক্তিদের উপর হামলা করতে পারে।

এ বিষয় তেজগাঁও রেজিস্ট্রি ভলিউম পাতা খেকো ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।