এম তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার উন্নয়নে ‘মার্কেট মেকারের’ ভূমিকায় ১৯৭৬ সাল থেকে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) একচ্ছত্রভাবে কাজ করছে। পুঁজিবাজারের স্বার্থে ৫টি মূলনীতি নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি)। বর্তমান পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও টেকসই করতে হলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পুঁজিবাজারের প্রতিষ্ঠান আইসিবি। বর্তমান পুঁজিবাজার পরিস্থিতিতে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, সাধারণ বীমার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-বীমাগুলোকে পাশে চাইছে আইসিবি।

প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, তাদের মতো রাষ্ট্রের বড় বড় ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজার থেকে সময় সময় শেয়ার কিনে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে পারে। তবে বর্তমান আইসিবি এমডি যোগদান করার পর থেকে পাল্টে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা। বিশেষ করে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান এমডি। তিনি বলেন, আইসিবিকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আইসিবি বিগত দিনের অভিযোগ এখন আর শুনতে চাই না। আমরা চাই আইসিবিকে বিনিয়োগকারীদের কাছে গ্রহনযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে।

আইসিবি মার্কেট মেকার না হলেও পুঁজিবাজারকে সার্পেট দিয়ে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন। তিনি পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষনকে বলেন, বিগত তিন বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) পুঁজিবাজারে যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে।

বাজারকে সাপোর্ট দিতে আর অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এতো বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ করেনি। পুঁজিবাজারে মার্কেট মেকার নেই। তবুও আইসিবি মার্কেট মেকারের ভূমিকা পালন করে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সাধারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আইসিবি সব সময় পুঁজিবাজারকে সার্পেট দিবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আবুল হোসেন বলেন, বেশ কিছু সরকারি ব্যাংক পুঁজিবাজারে আসছে। এ উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমি প্রথমত মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আসলেই বাজারের জন্য ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ার দরকার। এতে পুঁজিবাজার গতিশীল ও টেকসই হবে। তবে বাজারের স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরো এগিয়ে আসতে হবে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। তাহলে বাজার স্থিতিশীল হবে।

আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আইসিবি’র ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে আমি বলব আইসিবি পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে নিজের ভালো-মন্দের কথা কখনোই চিন্তা করেনি। যদি সেটা করত তাহলে, গত তিন বছরে আইসিবি যে বিনিয়োগ করেছে তা কেউ করতো না। আইসিবি ৬ হাজার ইন্ডেক্স থেকে বিনিয়োগ করেই যাচ্ছে। বাজার পতন হয়, আর আইসিবি শেয়ার কেনে। আইসিবি শেয়ার কিনলে বাজার একটু স্থিতিশীল হয় বা বাড়ে। আইসিবি’র যখন টাকা শেষ হয়ে যায়, তখন আবার বাজারে পতন ঘটেছিল। আসলে অনেক সময় আইসিবি ’র কিছু করার থাকে না। ফান্ড থাকা পর্যন্ত আইসিবি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।

আইসিবির এমডি আবুল হোসেন বলেন, ‘২০১০ সালের ধস শুরুর পর থেকে আইসিবি বিনিয়োগ করে আসছে। নিজের ব্যবসার কথা চিন্তা না করে শুধু শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিনিয়োগ করেছে। তবে ২০২০ সালে এসে আইসিবি বিনিয়োগ সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এক প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি এমডি বলেন, বর্তমানে দেশে অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে বেশকিছু প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে এবং এ কারণে এখন অর্থনীতিতে কিছুটা কঠিন সময় যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রকল্পগুলো শেষ হয়ে গেলে তখন পুরো পরিস্থিতি বদলে যাবে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে পুঁজিবাজারে বড় একটা উল্লম্ফন হবে।

তিনি আরো বলেন, দেখুন, বড় একটি প্রকল্প শেষ হওয়ার পর কিন্তু সেটিকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। পদ্মা সেতুসহ আরো যে মেগা প্রকল্প রয়েছে, সেগুলো চালু হয়ে গেলে এর অর্থনৈতিক প্রভাব হবে ব্যাপক। পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর মধ্যে কানেক্টিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে মানুষের আয়ক্ষমতা বাড়বে।

আর আয় বাড়লে মানুষের বিনিয়োগের সক্ষমতাও বাড়ে। তাছাড়া মেগা প্রকল্পগুলো বিদেশী বিনিয়োগের প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। তখন দেশে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। সবকিছু মিলিয়েই তখন মানুষ বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারে আসবে।

দেশের মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতার জন্যও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার প্রয়োজন। খেলাপি ঋণের মূল কারণ পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদে তহবিল না নেয়া। ব্যাংকগুলো স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করে সমস্যায় পড়েছে। তেমনি আইসিবি ও সে সমস্যার মধ্যে রয়েছে। আশা করি, পুঁজিবাজার ভাল হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। এছাড়া ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারে আসতেই হবে। তাই সামনে আমাদের পুঁজিবাজার আরো গতিশীল হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

এ বিষয় জানতে চাইলে অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, ‘আইসিবি এখন বিরাট আকার ধারণ করেছে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় আইসিবির বড় ধরনের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। বিগত কয়েক বছর ধরে আইসিবি বার বার বাজার উর্দ্ধমুখী করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করছে। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে আইসিবি বিশেষ ভুমিকা পালন করছে বলে আমি মনে করে।