দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চলতি অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, অনেকেই সেই সুযোগটি নিয়েছেন। গত ১ জুলাই অর্থবছর শুরু হওয়ার পর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৫৮ জন অপ্রদর্শিত আয়ের ঘোষণা দিয়েছেন বা কালো টাকা সাদা করেছেন। সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করেছে ১৩২ জন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরে জমা দেওয়া রিটার্ন থেকে জানা যায়, নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ফ্ল্যাট ও জমি কিনে কালো টাকা সাদা করেছেন ৩ হাজার ২২০ জন। সরকার এই খাত থেকে কর পেয়েছে ৩৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন ১৩৮ জন। তাদের কাছ থেকে সরকার কর পেয়েছে ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

এনবিআরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৩২ জন করদাতা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন। ফলে সরকার তথা এনবিআর সেই বিনিয়োগ থেকে কর বাবদ রাজস্ব পেয়েছে ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

বাজেটে এ অর্থের উৎসের ব্যাখ্যা ছাড়াই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে শর্ত দেওয়া হয়, যে কোনো ব্যক্তি করদাতা ১০ শতাংশ হারে কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করলে তার অর্থের উৎস নিয়ে কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এই বিনিয়োগকৃত অর্থ পুঁজিবাজারে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের ৩০ দিনের মধ্যে কর পরিশোধ করতে হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনবিআরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ধারা দুটো মেনে অপ্রদর্শিত সম্পদ ও অর্থ পুঁজিবাজারে, জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট কেনা বিনিয়োগ করছেন।

এনবিআরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৩ হাজার ৩৫৮ জন তাদের অপ্রদর্শিত অর্থ ও স্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে এখান থেকে এনবিআর কর বাবদ রাজস্ব পেয়েছেন ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন ১৩২ জন করদাতা। তাতে এনবিআরের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

অন্যদিকে অপ্রদর্শিত স্থাবর সম্পত্তি ও নগদ টাকা ঘোষণা দিয়েছেন ৩ হাজার ২২০ জন। এ থেকে এনবিআর ৩৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা কর পেয়েছে। সম্পত্তি বলতে জমি, ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট ইত্যাদি বোঝাবে। করদাতা আগের কর বছরগুলোতে এ ধরনের স্থাবর সম্পত্তি ও নগদ টাকা আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ না করলে এ বছর প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নগদ টাকার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আর জমি, ভবন, অ্যাপার্টমেন্টের জন্য এলাকাভেদে বর্গমিটার হিসেবে কর পরিশোধ করতে হবে।

জমির ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ধার্য করা আছে। আর বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গমিটারে ২০০ টাকা থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত কর ধার্য করা হয়েছে। এর আগে ১৯৭২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা সাদা করেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি। এ থেকে এনবিআর ১ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা কর পেয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ৯ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা সাদা করা হয়।

প্রসঙ্গত, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার পর অর্থনীতিবিদরা এর সমালোচনা করেন। অনেকের মতে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অনেক আগে থেকে দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু এতে সাড়া পাওয়া যায় না। এ ছাড়া এতে সৎ করদাতা নিরুৎসাহিত হন। অনেক আগে থেকেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে সরকার।

শিল্প খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এই সুযোগ প্রথম দেওয়া হয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে। বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনার কারণে দুই বছর পর এ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তৎকালীন তত্ত্বাধায়ক সরকার জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়।

বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। সব শেষে পু্ঁজিবাজার, জমি, ভবন, অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়।