মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: উঠানামার মধ্যে দিয়ে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। গত সপ্তাহের অধিকাংশ কার্যদিবস সূচকের উঠানামার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। সপ্তাহের শুরুতে বীমা খাতের আধিপত্য থাকলেও মঙ্গলবার থেকে জুন ক্লোজিং শেয়ারের আধিপত্য ছিল। ফলে এসব খাতে ধীর্ঘদিন আটকা থাকা বিনিয়োগকারীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করছেন।  ফলে বাজারের প্রতি নতুন কওে আস্থা ফিরে পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারের এই ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বরাবরই স্টেকহোল্ডাররা বিএসইসি’র নেতৃত্বকে কৃতিত্ব দিয়েছেন।

তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কিছু পদক্ষেপের কারণে বাজার এমন পরিস্থিতিতে এসেছে। কমিশনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদক্ষেপ হলো- আলোচ্য সময়ের মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানিসহ ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে আইপিও’র অনুমোদন দেয়া হয়। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় ১৩টি কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করা অন্যতম। এছাড়া নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জিরো টলারেন্সে অবস্থান করছে। শেয়ার কারসাজির দায়ে বড় ধরণের জরিমানা করেছে কয়েকটি কোম্পানিকে।

ফ্রিজ করেছে অনেক কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকদের বিও হিসেবে থাকা শেয়ার। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে অনেকের ব্যাংক হিসাব। এর বাইরেও ম্যাজিকের মতো কাজ করছে পরিচালকদের ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শেয়ার ধারনের বিষযে কমিশনের নির্দেশনা।

বন্ড মার্কেটকে গতিশীল করতে এনবিআরের সাথে বৈঠক করে কর সুবিধা বাড়ানো, ব্যাংকের নগদ লভ্যাংশ সেপ্টেম্বরের আগে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কথা বলা, আইসিবিকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেওয়াসহ অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। কমিশনের সর্বশেষ দৃশ্যমান পদক্ষেপ পুঁজিবাজারের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ।

জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়নে ১৫ হাজার কোটি টাকার দুটি আলাদা তহবিল গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠি দিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (আইসিবি) জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়। আর আইসিবিসহ স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য চাওয়া হয় আরও ১০ হাজার কোটি টাকা।

ডিএসই পরিচালক রকিবুর রহমান বলছেন, পুঁজিবাজার ইস্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরদর্শি সিদ্ধান্তে সাধারন বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরছে। এছাড়া বাজেটে পুঁজিবাজারে নানা সুযোগ সুবিধা ও ভালো আইপিও কারনে নতুন বিনিয়োগকারীর আগমন ঘটছে। তেমনি মাত্র ৬ মাসে পুনর্গঠিত কমিশন যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এছাড়া বাজারে চাঙ্গা ভাব বিরাজের প্রমাণও মিলেছে পরিসংখ্যানে। করোনা মাহামারির মধ্যেই গত আগস্ট মাসে ’বিশ্বসেরা’ পুঁজিবাজারের খেতাব পেয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। এই মাসে দেশের পুঁজিবাজার সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেছে। ওই সময়ে (আগস্টে) পুঁজিবাজারে ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ উত্থান হয়েছে।

এদিকে দেশের উভয় শেয়ারবাজার গত তিন কার্যদিবসের মত আজ বৃহস্পতিবারও উত্থানে মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ করেছে। আজ শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে, সেই সাথে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৯.৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯৭৪.৮৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৮.৯১ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ২২.১৪ পয়েন্ট এবং সিডিএসইসি ৭.৩০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৩৫.৫৩ পয়েন্ট, ১৭২৭.১২ এবং ১০০৯.২০ পয়েন্টে। ডিএসইতে আজ ৮২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৮৪১ কোটি ৭ লাখ টাকার।

ডিএসইতে আজ ৩৫২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮৩টির বা ৫১.৯৮ শতাংশ শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। দর কমেছে ৭৬টির বা ২১.৫৯ শতাংশের এবং ৯৩টি বা ২৬.৪২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১০৪.৪২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪২৬২.৫৬ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৫৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৪৪টির, কমেছে ৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫২টির দর। আজ সিএসইতে ২৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।