দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: তালিকাভুক্ত কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, করপোরেট ঘোষণা, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ারহোল্ডিংসহ প্রায় সব ধরনের তথ্য স্বয়ংক্রিভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশ হবে। সম্প্রতি ডিএসই নতুন একধরনের সফটওয়্যার বানিয়েছে, যেখানে কোম্পানিগুলো তাদের সব ধরনের তথ্য এন্ট্রি দেওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ হবে। এর ফলে কোম্পানির বিভিন্ন তথ্যের কাগুজে কপি স্টক এক্সচেঞ্জে সশরীরে জমা দেওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের দর্শনের সঙ্গে সংগতি রেখে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য একটি সমন্বিত অনলাইন ডেটা সংগ্রহ, তথ্য জমা ও প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম তৈরির অংশ হিসেবে ডিএসই এই সফটওয়্যার তৈরি করেছে। ডিজিটালি তথ্য জমা ও প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে গত ২২ জুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নির্দেশনার পরই স্টক এক্সচেঞ্জ ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে নিজস্ব উদ্যোগে সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু করে ডিএসই। এখন এই সফটওয়্যারের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রধান এই স্টক এক্সচেঞ্জটি। আগামী সোম ও মঙ্গলবার এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।

বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বিভিন্ন তথ্য যেমন প্রান্তিক প্রতিবেদন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ারহোল্ডিং, লভ্যাংশসংক্রান্ত করপোরেট ঘোষণা, এজিএম, ইজিএমসহ সব ধরনের তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জে কাগুজে কপি সশরীরে জমা দেয়। এরপর এটি ডিএসইর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ যাচাই-বাছাই করে নিউজ আকারে ওয়েবসাইটে আপলোড করে। এতে করে বিভিন্ন সময়ে ভুলভ্রান্তি হয়। এখন এই সফটওয়্যারের কাজ শুরু হলে কোম্পানিগুলো সব তথ্য সফটওয়্যারে সরাসরি এন্ট্রি দেবে। এ জন্য সফটওয়্যারটিতে বিভিন্ন আইনের কমপ্লায়েন্স করে মোট ৪৩টি মানদ- দেওয়া আছে।

সফটওয়্যারটিতে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইনের কমপ্লায়েন্স এমনভাবে দেওয়া আছে, কোম্পানি চাইলেই তথ্য জমা ও প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করতে পারবে না। সফটওয়্যারটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে কোম্পানির নিউজ প্রকাশের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স মেনে চলতে পারে। মোদ্দাকথা, সফটওয়্যারটিতে কমপ্লায়েন্স সেট করা থাকবে।

যেমন কোম্পানির প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে কোম্পানি ঘোষণা দেওয়ার তিন দিন পর হতে হবে পর্ষদ সভা, ট্রেডিং চলাকালে সভা হতে পারবে না, লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) থেকে রেকর্ড ডেটের ব্যবধান, এমন কমপ্লায়েন্স সফটওয়্যারে সেট করা থাকবে। এসব নিউজ কোম্পানি এন্ট্রি দেওয়ার পর সফটওয়্যারে আপলোড হয়ে যাবে। অবশ্য এর আগে এসব তথ্য ডিএসই যাচাই করবে।

বেসিক তথ্য যেমন কোম্পানির নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, পিএসআই লিঙ্ক ইত্যাদিতে কোনো পরিবর্তন এলে সফটওয়্যারটিতে কোম্পানি এন্ট্রি দিলে তা সরাসরি আপলোড হয়ে যাবে। কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালক, প্লেসমেন্টহোল্ডার, কর্মচারী-কর্মকর্তা, নিরীক্ষক, ব্যাংকার এবং উদ্যোক্তা-পরিচালক কিংবা কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ সব ধরনের ইনসাইডারদের বিও আইডিসহ সফটওয়্যারে এন্ট্রি দিতে হবে।

পরে উদ্যোক্তা-পরিচালক কিংবা প্লেসমেন্টহোল্ডার শেয়ার কেনাবেচার কোনো ঘোষণা দিলে তা ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমেই দিতে হবে। এর ফলে কেউ ঘোষণা ছাড়া শেয়ার কেনাবেচা করলে সফটওয়্যারটির মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে। শেয়ার কেনাবেচা সম্পন্ন হলে সফটওয়্যারে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়ে যাবে। করপোরেট অ্যাকশনের ক্ষেত্রেও একইভাবে তা আপডেট হবে। শেয়ার উপহারের ক্ষেত্রেও সফটওয়্যারটির মাধ্যমে অনলাইনে সম্পন্ন করা যাবে।

এ ছাড়া করপোরেট গভর্নেন্স তথ্য, মাসিক শেয়ারহোল্ডিং প্রতিবেদন, ফ্রি-ফ্লোট শেয়ারের তথ্য, বার্ষিক প্রতিবেদন, ডিভিডেন্ড কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদনও সফটওয়্যারের মাধ্যমে এন্ট্রি দিতে পারবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। এর জন্য কোম্পানিগুলোকে স্টক এক্সচেঞ্জে সশরীরে আসতে হবে না।

আগামী বছরের শুরুর দিকে সফটওয়্যারটি চালু হতে পারে বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের পর আগামী জানুয়ারি থেকে এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। এরপর ত্রুটি-বিচ্যুতি যদি কিছু থাকে, তা সংশোধন করে চূড়ান্তভাবে সফটওয়্যারটি চালু হবে।